এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় ২ শতাধিক নিহত: রয়টার্স

ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় ভেঙে পড়লো এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে ঘটেছে দুর্ঘটনাটি। এতে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বিমানটিতে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ২১৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক, ১১ শিশু এবং ২ জন শিশু ছিল। ভয়ংকর এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আহমেদাবাদের পুলিশপ্রধান জি.এস. মালিক। তিনি বলেন, উদ্ধার করা মৃতদেহগুলোর মধ্যে বিমানের আরোহীদের পাশাপাশি দুর্ঘটনাস্থলে থাকা কিছু মানুষও থাকতে পারেন।
এখন পর্যন্ত একজন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম রমেশ বিশ্বাস কুমার। হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি বলেন, উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ড পর বিকট শব্দ শুনি, তারপরই সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। চারপাশে শুধু লাশ আর বিমানের ধ্বংসাবশেষ। আমি কোনোমতে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় দিই, এরপর কেউ একজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
দুর্ঘটনাটি ঘটেছে দুপুরের খাবারের সময় শহরের বিখ্যাত বিএম মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলের ওপর। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থীও মারা গেছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব ধনঞ্জয় দ্বিবেদী জানান, বিমানটি ভেঙে পড়েছে সিভিল হাসপাতাল ছাত্রাবাস ও কর্মচারী কোয়ার্টার সংলগ্ন এলাকায়। ওইসব ভবনের বাসিন্দারাও আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে বিমানের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিমানের লেজ আটকে আছে ভবনের ছাদের ওপর। ভারতের এনডিটিভি ও সিএনএন-নিউজ১৮–এর খবরে বলা হয়েছে, বিমানের প্রধান অংশটি পড়ে হোস্টেলের ডাইনিং হলের ওপরেই, যেখানে অনেক শিক্ষার্থী খাবার খাচ্ছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী বলেন, ১১এ নম্বর আসনের যাত্রী রমেশকে জীবিত পাওয়া গেছে। আহত অবস্থায় আরও কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ বেঁচে থাকতে পারেন।
দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭–৮ ড্রিমলাইনার, যা ২০১৩ সালে প্রথম উড়েছিল। ২০১৪ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বোয়িংয়ের মতে, ড্রিমলাইনার মডেলের এটিই প্রথম বড় দুর্ঘটনা। বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে উড্ডয়ন করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেইডে সংকেত পাঠায় এবং তারপর থেকেই আর যোগাযোগ ছিল না।
বিমানটিতে থাকা ২৪২ আরোহীর মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডীয় নাগরিক ছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সি.আর. পাতিল জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও রয়েছেন।
ভারতের বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্রুততার সঙ্গে সব সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্ঘটনার পর আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট বন্ধ করা হয়, যদিও পরে সীমিত আকারে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়।
দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। মার্কিন জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড (এনটিএসবি) জানিয়েছে, তারা একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে। বিমানের ইঞ্জিন নির্মাতা জিই অ্যারোস্পেস জানিয়েছে, তারা একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে ককপিট ডেটা পর্যালোচনা করবে। বোয়িং কোম্পানি জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করছে।
দুর্ঘটনাকবলিত এয়ার ইন্ডিয়া বর্তমানে টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন। ২০২২ সালে সরকার থেকে অধিগ্রহণের পর ২০২৪ সালে ভিস্তারার সঙ্গে একীভূত হয় এয়ারলাইনটি। টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরন জানিয়েছেন, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করা হবে এবং হোস্টেল পুনর্নির্মাণেও সহায়তা করা হবে।
এর আগে ২০২০ সালে কেরালার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে একটি এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট দুর্ঘটনায় পড়ে ২১ জন নিহত হন। ওই ঘটনাটির চার বছর পর ফের বড় ধাক্কা খেল ভারতের বিমান পরিবহন খাত।