ঢাকা শনিবার, ৭ই জুন ২০২৫, ২৪শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


বন্ধু যখন শত্রু


৬ জুন ২০২৫ ০৯:২৮

ফাইল ফটো

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডামি প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে ইলন মাস্ককেই বুঝতেন। তিনি হয়ে ওঠেছিলেন যেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিপতি। বিশ্বের এই শীর্ষ ধনীকে এমন দিন দেখতে হবে তা ঘূণাক্ষরেও কেউ আঁচ করতে পেরেছিলেন কিনা তা কে জানে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সম্পর্কগুলো যে এরকমই হয় তা অনেকটা অনুমেয়ই ছিল।

 

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির পেছনে ২৭ কোটি ডলার খরচ করে ট্রাম্পের ছায়াসঙ্গী হয়ে উঠেছিলেন টেসলার কর্ণধার। হোয়াইট হাউজের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে দেখা যেত তাকে। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্কে খানিকটা ‘আলগা ভাব’ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছিল। গেল সপ্তাহে ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল’ কর ও ব্যয় বিলের সমালোচনা করে প্রশাসনিক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর সে সম্পর্ক যে আর আগের জায়গায় নেই তা বুঝতে কারও বাকি থাকেনি।

 

আর এবার প্রকাশ্যেই একে অপরের সঙ্গে বিবাদে জড়ালেন। ট্রাম্প বলছেন, ইলন মাস্কের কার্যকলাপে তিনি ‘হতাশ’। মাস্কও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। পাল্টা মন্তব্যে ট্রাম্পকে বলেছেন ‘অকৃতজ্ঞ’।

 

ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছে মাস্কের তীব্র সমালোচনা যেমন করছেন, মাস্কও তার এক্স প্লাটফর্মে একের পর এক পোস্টে ট্রাম্পকে পাল্টা তুলোধুনো করছেন।

 

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্র সফররত জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের সঙ্গে বৈঠকের সময় মাস্ককে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প।

 

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, ইলন মাস্কের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক ছিল। সেটা আর থাকবে কি না আমি জানি না। আমি মাস্ককে নিয়ে খুবই হতাশ। আমি তাকে অনেক সাহায্য করেছি। তিনি এখানে অন্যদের চেয়ে বিগ বিউটিফুল বিলের ভেতরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালভাবে জানতেন। এতে তার কোনও সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। হঠাৎই তার সমস্যা দেখা দিল। 

 

বিল নিয়ে মাস্কের সমালোচনা বিস্মিত করেছে বলেও জানান তিনি।

 

এরপরই এক্সে পাল্টা জবাব দিয়ে ইলন মাস্ক লেখেন, আমি না থাকলে ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যেতেন। ডেমোক্র্যাটরা হাউজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিত। আর সেনেটে রিপাবলিকানদের সূক্ষ্ম ব্যবধান (৫১-৪৯) থাকত। অথচ ট্রাম্প এই ধরনের অকৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছেন।

 

নির্বাচনে জয়ের পর ইলন মাস্কের জন্য আলাদা একটি দপ্তর তৈরি করেছিলেন ট্রাম্প। সেই সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দপ্তর (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডিওজিই)- এর কাজ ছিল প্রশাসনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাঁট করে অর্থনৈতিক সাশ্রয় করা।

 

গত মাসে কর ও ব্যয় সংক্রান্ত একটি বিল অনুমোদন করার পর ট্রাম্প এটিকে ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নাম দেন। সেই বিল নিয়ে পরে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে।

 

মাস্কের দাবি ছিল, তিনি এবং তার সহকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনে থেকে এতদিন ব্যয় কমাতে যে কাজ করে এসেছেন সবই ব্যর্থ হবে এই বিলের কারণে।

 

বিলটি তাকে দেখানোর আগেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সেটি পাস করানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বলেও সমাজমাধ্যমে অভিযোগ করেন মাস্ক।

 

তবে বিলটির বিরোধিতায় মাস্কের ব্যক্তিগত কারণ থেকে থাকতে পারে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

 

তিনি বলছেন, পর্যায়ক্রমিক কর ও ব্যয় সংক্রান্ত এই বিলের সরাসরি প্রভাব পড়ত মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলার উপর।