ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৯শে মে ২০২৫, ১৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


হিন্দু রাষ্ট্র ভারতের সীমান্তজুড়ে অশুভ শক্তি, শক্তিশালী হওয়ার বিক


২৬ মে ২০২৫ ১২:৪৮

ফাইল ফটো

ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, ভারত ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ এবং এটিই সংঘের ‘শাশ্বত চিন্তা।’ ভারতের সীমান্তজুড়ে অশুভ শক্তির উপস্থিতি আছে বলেও দাবি করেন তিনি। আর তাই তিনি হিন্দু সমাজকে একত্রিত হয়ে ভারতকে এতটাই শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে একাধিক শক্তির জোটও এটিকে পরাজিত করতে না পারে।

 

আরএসএস-এর সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘অর্গানাইজার’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহন ভাগবত এ মন্তব্য করেন। তিনি ‘আমাদের সব সীমান্তে মন্দ শক্তির উপস্থিতি’ উল্লেখ করে বলেন, এ কারণেই ভারতের ‘শক্তিশালী হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’ এই সাক্ষাৎকার পেহেলগাম গণহত্যা ও অপারেশন সিন্দুরের আগে নেওয়া হয়েছিল।

 

ভাগবত ‘হিন্দু রাষ্ট্রের’ ধারণার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এটি সংঘের প্রতিটি কাজের পেছনে ‘শাশ্বত চিন্তা’ হিসেবে বিদ্যমান। তিনি বলেন, ‘সংঘে নিত্য (স্থায়ী) কী? বালাসাহেব (দেওরাস, সংঘের তৃতীয় প্রধান) একবার বলেছিলেন, হিন্দুস্তান একটি হিন্দু রাষ্ট্র। এ ছাড়া সংঘে আর সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। সমগ্র হিন্দু সমাজ এই জাতির জবাবদিহিমূলক রক্ষক। এই দেশের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি হিন্দু। অতএব, এটি একটি হিন্দু রাষ্ট্র।’

 

প্রতিবেশী দেশ, যেমন বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর তথাকথিত আক্রমণ ও শোষণের বিষয়ে ভাগবত বলেন, হিন্দু সমাজের একত্র হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘হিন্দুরা যথেষ্ট শক্তিশালী হলেই কেবল কেউ হিন্দুদের নিয়ে চিন্তা করবে। যেহেতু হিন্দু সমাজ ও ভারত একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাই হিন্দু সমাজের গৌরবময় প্রকৃতি ভারতের জন্য গৌরব বয়ে আনবে। শুধুমাত্র এমনই একটি শক্তিশালী হিন্দু সমাজ ভারতের সেই সব মানুষের জন্য একটি মডেল তুলে ধরতে পারে, যারা নিজেদের হিন্দু মনে করেন না, কারণ একসময় তারাও হিন্দু ছিলেন।’

 

আরএসএস প্রধান বলেন, ‘যদি ভারতের হিন্দু সমাজ শক্তিশালী হয়, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্বজুড়ে হিন্দুরা শক্তি অর্জন করবে। এই কাজটি চলছে, তবে এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।’ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিন্দুরা ‘ধীরে ধীরে তবে নিশ্চিতভাবে’ প্রতিরোধ করছে।

 

ভাগবত বলেন, ‘এবার বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নৃশংসতার বিরুদ্ধে যেভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এমনকি স্থানীয় হিন্দুরাও এখন বলছে—“আমরা পালাব না। আমরা থাকব এবং আমাদের অধিকারের জন্য লড়ব”।’

 

ভারতের নিরাপত্তা, সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পর্কে সংঘের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভাগবত বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আমাদের অন্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হওয়া উচিত। কেউ আমাদের জয় করতে পারবে না—এমনকি যদি একাধিক শক্তি একত্রিত হয় তবুও নয়। বিশ্বে মন্দ শক্তি আছে যারা স্বভাবতই আক্রমণাত্মক।’

 

ভাগবত বলেন, ভারতের ক্ষমতার প্রকৃতি হওয়া উচিত ‘শিষ্টের লালন এবং দুষ্টে দমনের জন্য। তবে যখন কোনো বিকল্প থাকে না, তখন দুষ্টকে জোরপূর্বক নির্মূল করতে হয়।’ তিনি এর আগে, এক বিবৃতিতে অপারেশন সিন্দুর পরিচালনার জন্য সরকারের প্রশংসা করে বলেছিলেন, এটি ‘দেশের আত্মসম্মান ও মনোবল বৃদ্ধি করেছে।’ প্রসঙ্গত, ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির আদর্শিক সংগঠন হলো আরএসএস। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একসময় আরএসএস-এর সদস্য ছিলেন।