ঢাকা মঙ্গলবার, ২১শে মে ২০২৪, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


এত বড় ঢেউ আসবে কেউ ভাবেনি


৩ অক্টোবর ২০১৮ ২২:০৮

ছবি সংগৃহীত

শুক্রবার সারাদিন ধরেই ছোট ছোট ভুমিকম্প হচ্ছিল। কিন্তু সন্ধ্যের দিকে হঠাৎ পালু উপকুলের অল্প দূরেই মাটির ৬ মাইল নিচে ভূ-স্তরের যে টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থল আকস্মিকভাবে তা পিছলে যায়।

১৯৯৫ সাল থেকে ভূস্তরের এই বিশেষ ফাটলটি নিয়ে গবেষণা করছেন বান্দুং ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির হামজা লতিফ।

তিনি বলছিলেন, পারু শহরটি গড়ে উঠেছে পলিমাটির পুরু স্তরের ওপর। আর ভূমিকম্পের আঘাতে পাথুরে মাটি যতটা নড়ে, তার চাইতে পলিমাটি নড়াচড়া করে অনেক বেশি। তাই এর ওপর তৈরি করা খুব কম ইমারতই সেই আলোড়ন সহ্য করতে পারে। পালুতে আগেও সুনামি হয়েছে। ১৯২৭ সালে একটা সুনামি হয় যখন উপসাগরের মুখে ঢেউটা ছিল ৩ থেকে ৪ মিটার উঁচু। কিন্তু পালুর উপকুলে পৌঁছানোর সময় তা বেড়ে ৮ মিটার অর্থাৎ প্রায় ২৫ ফিট উঁচু হয়ে যায়।

ইন্দোনেশিয়ার পালুতে আঘাত হানা সুনামির ঢেউ ছিল ৬ মিটার বা প্রায় সাড়ে ১৯ ফুট উঁচু। পালুতে ভুমিকম্প থেকে এত বড় ঢেউ সৃষ্টি হলো কেন - তা স্থানীয় লোকদের তো বটেই এমনকি বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করেছে। ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত ইন্দোনেশিয়ায় এ পর্যন্ত ১২৩৪ জন নিহত হয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৭.৫ মাত্রার যে ভুমিকম্পটি হয়েছে তা থেকে এমন ভয়ঙ্কর সুনামি হবে - তা অনেকেই ভাবতে পারেনি। এর পেছনে কাজ করেছে পালুর ভৌগোলিক অবস্থান, সময়, আর দুর্বল পূর্ব- সতর্কীকরণ ব্যবস্থা। একটা নির্দিষ্ট মাত্রার ভুমিকম্প হলে কী হতে পারে, কতটা ক্ষতি হতে পারে - তা নানা রকমভাবে অনুমান করা যায়। পালুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে ঠিক সেটাই হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে এ বছরে সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের রেকর্ড এটি। বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম দ্বীপ সুলাওয়েসির পালু শহরে শুক্রবার ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সেখানে কম্পনের পর আছড়ে পড়ে প্রলয়ংকরী সুনামির ঢেউ। সুউচ্চ ঢেউ লন্ডভন্ড করে দেয় উপকূলীয় এলাকা।


যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মোহাম্মদ হায়দারজাদেহ বলছিলেন, "আমার হিসেবে পালুতে সমুদ্রের তলদেশে বিকৃতি (ডিফরমেশন) ঘটেছে ৪৯ সেন্টিমিটার।এতে সুনামির ঢেউ এক মিটারেরও কম উঁচু হবার কথা। ৬ মিটার হবার কথা নয়। কাজেই অন্য কিছু একটা ঘটেছে।"

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফিলিপ লিউ লি-ফ্যান বলছিলেন, "পালু-কোরু ফল্ট লাইন নিয়ে আমরা খুব বেশি ভাবতাম না -কারণ এখানে টেকটোনিক প্লেট দুটো নড়াচড়া করে ডাইনে-বাঁয়ে, ওপরে-নিচে নয় - তাই বিপজ্জনক ঢেউ সৃষ্টি হবার ঝুঁকি কম।"

অধ্যাপক লি-ফ্যান বলছিলেন-"আমরা বের করার চেষ্টা করছি কী ঘটেছে। হতে পারে যে ভূমিকম্পের ফলে হয়তো সাগরের তলদেশে একটা ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছিল, অথবা ফল্ট-লাইনটাও অন্যরকম আচরণ করে থাকতে পারে - আমরা এখনো জানি না"

সুনামি যখন সৃষ্টি হলো - তখন সরু একটা ১০ কিলোমিটার লম্বা উপসাগরের এক মাথায় গড়ে ওঠা পালু শহরের বাঁচার কোন সুযোগ ছিল না। মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে পালুতে আঘাত হানলো তিন-তিনটি ঢেউ। যেহেতু উপসাগরটা সরু, তার ওপর ঘোড়ার খুরের আকৃতির - তাই ঢেউগুলো ক্রমাগত বড় হচ্ছিল, আর দু পাশের তীরে আঘাত হানতে হানতে এগুচ্ছিল।

২০০৪ সালে সুনামিতে মারা গিয়েছিলেন আড়াই লক্ষ লোক। এর পর পুরো অঞ্চল জুড়ে সুনামির আগাম সতর্কতার জন্য বহু সেন্সর বসানো হয়। কিন্তু প্রফেসর লিউ বলছেন, এ ব্যবস্থা কাজ করেনি। আসলে ২০১২ সাল থেকেই অনেকগুলো সেন্সর নষ্ট হয়ে পড়েছিল। সূত্র: বিবিসি বাংলা

আরকেএইচ