বৈঠক ব্যর্থ, সীমান্তে শক্তি বাড়াচ্ছে চীন-ভারত

প্রাণঘাতী সংঘাতের পর সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে চীন ও ভারতের সামরিক পর্যায়ে দুই দফা বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে। দু’পক্ষই সীমান্তে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে। আনন্দবাজার জানায়, বুধবারের পরে বৃহস্পতিবারেও চীন ও ভারতের মেজর জেনারেল পর্যায়ের বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি। বৃহস্পতিবার প্রায় ছয় ঘণ্টা বৈঠক করেন দু’দেশের সেনা কর্মকর্তারা। কিন্তু তার পরেও পূর্ব লাদাখে ‘ভারতের জমি’ ছেড়ে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখায়নি চীনা সেনারা। উল্টো সেখানে নিজেদের শক্তি আরও বাড়িয়েছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। এ অবস্থায় পাল্টা পেশিশক্তি দেখাতে ১২টি সুখোই ও ২১টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান চেয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনী যা কিনতে খরচ হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
গত দু’দশক ধরেই ভারতীয় বিমান সেনার অন্যতম ভরসা হলো সুখোই। কয়েক স্কোয়াড্রন সুখোই এখন সীমান্ত সংলগ্ন ফরওয়ার্ড বেসগুলোতে এনে রাখা হয়েছে। আগামী মাস থেকে অত্যাধুনিক রাফাল বিমানও আসতে শুরু করবে। দেশীয় রাজনীতির স্বার্থে নরেন্দ্র মোদি সরকার পেশি প্রদর্শনের পথ নিলেও পূর্ব লাদাখে ভারতের পক্ষে এই মুহূর্তে রণকৌশলগতভাবে কোনো বড় পদক্ষেপ করা কঠিন বলেই মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের। কারণ, যেভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডের কয়েক কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে চীনা সেনা ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছে, তাতে তাদের হটাতে গেলে ইনফ্যান্ট্রি বা স্পেশাল ফোর্স নামাতে হবে।
এদিকে গালওয়ান উপত্যকায় সোমবার রাতের সংঘর্ষের পরে সেখানে সামরিক শক্তি আরও বাড়াচ্ছে চীন। অভিযোগ, নিজেদের স্বার্থে গালওয়ান নদীর ধারাও পাল্টে দিতে শুরু করেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় বিকল্প হলো বিমান হামলা। কিন্তু পাহাড়ি এলাকায় বিমান হামলার সীমাবদ্ধতা কার্গিল যুদ্ধের সময়েই স্পষ্ট হয়েছিল। ওই ধরনের হামলায় নিজেদের সেনার হতাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর স্পেশাল ফোর্স নামানো বা বিমান হামলার অর্থই হল পুরাদস্তুর যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়া যা আদৌও কাম্য নয় দিল্লির।
ফলে ভারতের হাতে আলোচনা ছাড়া সেই অর্থে অন্য কোনো রাস্তা খোলা নেই। যদিও গত দু’দিনের আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি এক চুলও। চীন যেভাবে গালওয়ান উপত্যকাকে নিজেদের বলে দাবি তুলে সুর চড়াচ্ছে, তাতে তারা যে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেছে, সেটা প্রমাণ করাই ভারতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। লাদাখের মাটিতে পরিকাঠামো গড়ে বসা চীনা সেনাদের আশু ফিরে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। চীনের এই মনোভাবের নিরিখে আলোচনায় কতটা কাজ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।