ঢাকা মঙ্গলবার, ২১শে মে ২০২৪, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর যে প্রস্তাব


২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:০০

রোহিঙ্গা সঙ্কট সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার, তাদেরকেই এ সঙ্কট সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এ সঙ্কট নিরসনে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন তিনি।

সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের প্রধান সদর দফতরে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

এ সময় নিজের ‘শরণার্থী’ হওয়ার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শরণার্থীদের কষ্ট কি তা আমি জানি। কারণ আমিও দুইবার শরণার্থী ছিলাম। প্রথমবার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়। তখন আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।

‘আর দ্বিতীয়বার হচ্ছে-১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। যখন মা-বাবা, ১০ বছরের ছোট রাসেলসহ তিন ভাই, দুই ভাইয়ের স্ত্রী, এক চাচাসহ ১৮জনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই সময় ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছয়বছর আমি আর আমার ছোটবোন শরণার্থী হিসেবে বিদেশে ছিলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব নিয়ে আমরা আমাদের সীমান্ত খুলে দিয়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা শুধু তাদের জীবনই বাঁচাইনি, পাশাপাশি সীমান্তে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও বজায় রেখেছি।

‘বৈশ্বিক শরণার্থী বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক: বৃহত্তর সার্বভৌমত্ব ও সহযোগিতার একটি মডেল’ শীর্ষক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সব শরণার্থীরই নিজভূমিতে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে, যা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরও তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে ফেরত নিতে হবে।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শরণার্থীদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য তাদের নিজ দেশকেই উদ্যোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে শরণার্থী সঙ্কট দেখা দিয়েছে তার মূলোৎপাটন করা দরকার।

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, সমসাময়িক এই পরিস্থিতিতে আমি তিনটি পরামর্শ তুলে ধরতে চাই। প্রথমত-রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে বৈষম্যমূলক আইন, নীতি ও পদ্ধতি মিয়ানমারকে অবশ্যই বাতিল করতে হবে এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলো উদঘাটন ও সময়মতো প্রকাশ করতে হবে।

‘‘দ্বিতীয়ত, মিয়ানমারের সব রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, অধিকার ও নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে সব রোহিঙ্গা নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য মিয়ানমারে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরি করতে হবে। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারকে জবাবদিহিতা ও বিচারের আওতায় আনা। বিশেষ করে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনে’র সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।’’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন (এফএফএম) একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, রাখাইনে ব্যাপকহারে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধানসহ ছয় শীর্ষ সেনা জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি হওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এদিকে সোমবার দুপুরে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাং বলেন, সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করার অধিকার জাতিসংঘের নেই।

এর আগে স্থানীয় সময় ২৩ সেপ্টেম্বর (রোববার) বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে নিউজার্সির নিউওয়ার্ক লিবার্টি বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি। সেখানে তাকে স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে ২৬ সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ পরিষদের জেনারেল ডিবেট অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেবেন।

আরআইএস