ঢাকা শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


করোনাভাইরাস: হিরো এখন ডা. লিকরোনাভাইরাস: হিরো এখন ডা. লি


৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:৩৫

করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। এখনও এ ভাইরাসের টীকা আবিষ্কার না হওয়ায় এ উৎকণ্ঠা আরো বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এরই মধ্যে চীনে হিরো হয়ে উঠেছেন ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং। এর কারণ, তিনিই প্রথম করোনা ভাইরাসের সতর্কতা দিয়েছিলেন সহকর্মী ডাক্তারদের। সে জানুয়ারির প্রথম দিকের কথা। ডাক্তার লি যখন সহকর্মীদের সতর্ক করলেন ভাইরাস সম্পর্কে তখন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।

এমনকি তার কাছে পুলিশ পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হয়। তার ‘মিথ্যা প্রচারণা’ বন্ধ করতে বলা হয়। অনলাইন বিবিসি বলছে, এর পর প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেছে। এখন করোনাভাইরাস শুধু চীনের জন্যই নয়, সারা বিশ্বে আতঙ্কের নামে পরিণত হয়েছে। চীনের ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশির ভাগ দেশ চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। পর্যটকরা যাচ্ছেন না। বিদেশী ক্রেতারা সেখানে যাচ্ছেন না বললেই চলে।

এরই মধ্যে ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং তার কাহিনী পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনিও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে হাসপাতালে। সেখান থেকে লেখা ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, হ্যালো এভরিওয়ান, আমি লি ওয়েনলিয়াং। আমি উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ।

ডা. লি ডিসেম্বরে কাজ করছিলেন ওই হাসপাতালে। ওই সময়েই উহান থেকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি। ডা. লি তার হাসপাতালে এই ভাইরাসে সংক্রমিত সাতজন রোগি পান। তার কাছে মনে হয়েছিল এটি সার্স ভাইরাসের মতো কিছু একটা। এই সার্স ভাইরাস ২০০৩ সালে বিশ্বজুড়ে মহামারিতে রূপ নিয়েছিল। এবার উহানের হুনান সি ফুট মার্কেট থেকে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে বলে ধারনা করা হয়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা করে রাখা হয়েছে হাসপাতালে।

একটু পিছন ফিরে দেখা যাক। ৩০ শে ডিসেম্বর ডা. লি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি চ্যাট গ্রুপে সহকর্মী ডাক্তারদের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তাতে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সতর্কতা দেন তিনি। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে তাদেরকে নিরাপত্তামুলক পোশাক পরার অনুরোধ করেন। ওই সময় এটা কি রোগ তা ঠিকমতো জানতেন না ডা. লি। পরে এটাকে সনাক্ত করা হয় নতুন করোনাভাইরাস হিসেবে। ওই পোস্ট দেয়ার চারদিন পরে তাকে পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোতে ডেকে নেয়া হয়। তাকে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়।

ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ডা. লি মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন, যা সমাজে মারাত্মক বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে। ওই চিঠিতে তাকে বলা হয়, আমরা আপনাকে খুব কঠোরভাবে সাবধান করে দিচ্ছি: যদি আপনি একগুঁয়েমি করেন, এমন অশিষ্টতা দেখান এবং অব্যাহতভাবে অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করেন, তাহলে আপনাকে বিচারের আওতায় আনা হবে। আপনি কি তা বুঝতে পেরেছেন?

এই চিঠিতে ডা. লি নিজের হাতে লিখেছেন, ইয়েস, আই ডু। অর্থ্যাৎ, হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি। এখানেই শেষ নয়। ‘গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে পুলিশ আট ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করে। তার মধ্যে ডা. লি অন্যতম। জানুয়ারির শেষের দিকে ডা. লি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবো’তে ওই চিঠিটির একটি কপি পোস্ট করেন এবং ব্যাখ্যা করেন কি ঘটেছিল তার সঙ্গে। কিন্তু ততক্ষণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক।

পুলিশের কাছ থেকে ফেরার এক সপ্তাহ পরে ডা. লি একজন নারীকে গ্লুকোমার চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, ওই নারী নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এরপর ১০ই জানুয়ারি কাশি শুরু হয় ডা. লি’র। তিনি এসব বিষয় ওই ব্যাখ্যায় বলেছেন। আরো বলেছেন, এর পরের দিনই তার জ্বর হয়। দু’দিন পরে তিনি হাসপাতালে যান। তার পিতামাতাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদেরকেও হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এর ১০ দিন পরে ২০ শে জানুয়ারি চীন নতুন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের জরুরি ঘোষণা দেয়। ডা. লি বলেছেন, করোনাভাইরাসের জন্য তার বেশ কয়েক দফা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ফল নেতিবাচক এসেছে। কিন্তু ৩০ শে জানুয়ারি তিনি আবার পোস্টে বলেছেন, এদিন নিউক্লিক এসিড টেস্ট করানো হয়েছে। তাতে পজেটিভ ফল এসেছে।

তার এই পোস্টে মন্তব্যে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। তার প্রশংসা করছেন। তার মধ্যে একজন লিখেছেন, ডা. লি একজন হিরো। ভবিষ্যতে চিকিৎসকরা আগেভাগে সতর্কতা দেয়ার ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন থাকবেন। একটি নিরাপদ স্বাস্থ্য উপযোগী পরিবেশের জন্য প্রয়োজন লাখ লাখ লি ওয়েনলিয়াংয়ের।

নতুনসময়/আইকে