ছুটির দিনে লোকে লোকারণ্য বইমেলা
![সংগৃহিত](https://www.natunsomoy.net/uploads/shares/1707491232.PXL_20240209_110707783-2024-02-09-21-28-52.jpg)
টিএসসি দিয়ে অমর একুশে বইমেলায় প্রবেশের যে গেইট, সেখানে পাঠক-দর্শকের দীর্ঘ লাইন। মেলায় প্যাভিলিয়ন-স্টল ঘিরে পাঠকের তীব্র ভিড়।
কেউ পছন্দের বই উল্টে দেখছেন; কেউ তুলছেন ছবি। কেউ-বা প্রিয় লেখক, বন্ধু, পরিচিতজনদের সঙ্গে মজেছেন আড্ডায়। শুক্রবার বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেন লোক-লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে।
মেলায় আগ্রহী পাঠক যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন দর্শনার্থীরা। ছুটির দিনে সুযোগ পেয়ে মেলায় এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষরা। বাবা-মা, ভাই-বোন, নবদম্পতি থেকে শুরু করে প্রেমিক-প্রেমিকা, কিশোর, যুবক, শিশু, নারীসহ নানা বয়স ও সম্পর্কের মানুষ বইমেলায় রয়েছেন। মেট্রোরেলের সুবাদে অন্যান্যবারের তুলনায় উপস্থিতিও বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় স্টল-প্যাভিলিয়নের মাঝে ফাঁকা স্থানে তীব্র লোক সমাগম। দ্রুত পায়ে হাঁটার সুযোগ তো নেই-ই। ধীর পায়ে হাঁটলেও গায়ে গাঁ লেগে যায়।
মেলায় এত ভিড়েও আসতে পেরে আনন্দিত শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, চাকরির কারণে মেলায় তেমন আসতে পারি না। শুক্রবারে অনেক লেখক থাকেন। বন্ধু-পরিচিতজনরাও থাকেন। তাই এইদিনে ভিড় থাকলেও মনে একটা আনন্দ থাকে।
মেলার মিরপুর থেকে এসেছেন শামীম হোসেন। এবছর প্রথমবারের মতো আসতে পেরে আনন্দিত তিনি।
পাঠক সমাবেশে মায়ের সঙ্গে এসেছেন সালমান হোসেন। মায়ের কাছে একটি গল্পের বইয়ের আবদার করছেন বারবার। তার মা বাংলানিউজকে জানান, এখন কিনতে চাইছে, কিন্তু বাসায় নিলে আর খুলেও দেখবে না।
ছুটির দিনে মেলায় পাঠক যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে লেখকদেরও উপস্থিতি। অন্যপ্রকাশে আজ এসেছেন সাম্প্রতিক সময়ের জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন। তাকে ঘিরে বড়সড় জটলা তৈরি হয়েছে। অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন বইয়ে প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফের জন্য।
এদিকে ছুটির দিনে বিক্রি নিয়ে খুশি প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মেট্রোরেলের কারণে এবার উপস্থিতি ভালো, বিক্রিও সন্তোষজনক।
আহমদ পাবলিশিং হাউজের বিক্রয়কর্মী শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, বিক্রি মোটামুটি ভালো। কখনও বেশি হয়, কখনও কম।
শোভা প্রকাশের বিক্রয়কর্মী তাসনীম কবির তৃষা বলেন, বইয়ের বিক্রি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। মেলায় অনেক পাঠক রয়েছেন। সবমিলিয়ে জমজমাট হবে আশা করি।
পেন্সিলের স্থিরচিত্রে দর্শকের আগ্রহ : টিএসসি গেট দিয়ে মেলায় প্রবেশ করলেই চোখ পড়ে কয়েকজন মনযোগী চিত্রকরের ওপর। দীর্ঘক্ষণ থেকে একমনে সামনে থাকা ব্যক্তির ছবি আঁকছেন তারা। সাদা পাতার ওপর পেন্সিলের খোঁচা; তাতেই তৈরি হচ্ছে অনুরূপ চিত্র। এই চিত্রকরদের দেখতেও ভিড় জমিয়েছেন কিছু উৎসুক দর্শক।
সুযোগ পেয়ে কেউ আঁকাচ্ছেন নিজের ছবি; কেউবা সন্তানের। স্মৃতি করে রাখতে কেউবা যুগলবন্দি ছবিও আঁকিয়ে নিচ্ছেন কেউ কেউ। দক্ষতা ও দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে হুবহু এঁকে দেন এই শিল্পীরা। ছবির আকার ভেদে পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন তারা।
মেলায় প্রবেশের শুরুতেই আরও চোখে পড়বে লেখক বলছি মঞ্চ। মঞ্চে আলোচনা করছেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন বাদল। তার দিনাজপুর বসবাসের তিনবছরের অভিজ্ঞতায় তিনি যা দেখেছেন তার ভিত্তিতে রচিত উপন্যাস ‘বিবর্ণ পান্ডুলিপি’। দিনাজপুরের চোরাচালানসহ নানা ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন লেখক বলছি মঞ্চে।
তবে এখানে সেই অর্থে মানুষের উপস্থিতি নেই। মঞ্চকে খুব একটা জাঁকালো করে সাজানো হয়নি। পাশ দিয়ে কোনো পাঠক হেঁটে গেলে তার চোখ এখানে আটকাবে না। আড়ম্বর মেলায় এটিও অনেকটা অনাড়ম্বরই।