ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২

ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ-রুটে চাদাঁবাজির মহোৎসব


৩ মে ২০১৯ ২১:৫৩

ছবি সংগৃহিত

দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো নৌ-যোগাযোগ মাধ্যম। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু লঞ্চ মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ভোলার ১৮ লাখ মানুষ।
এসকল রুটে কোন না কোনভাবে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীদের। ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ-রুটে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ২১ জেলার সাথে যোগাযোগ মাধ্যম।

এই রুটটিতে বরাবরই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি যাত্রী হয়রানির অভিযোগ এখন চরম আকারে ধারণ করেছেন। গত আট মাসে এ রুটে লঞ্চ মালিকদের মনগড়া তিনবার ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন নৌযান মালিকরা। আদায় করা হচ্ছে নির্ধারিত থেকে অতিরিক্ত ভাড়া। যাত্রীদের অভিযোগ, বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্টের দিকে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত নৌযানগুলোয় যাত্রীপ্রতি ভাড়া গুনতে হতো ৮০ টাকা। এর দুই মাসের মাথায় কোনো কারণ ছাড়াই এ ভাড়া ২০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়। চলতি বছরের শুরুতে লঞ্চ মালিকপক্ষ আবারো ২০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করে।

গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ১২০ টাকা নেয়া হলেও গত মার্চে শুরুতে নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১৫০ টাকা। রুটটিতে বর্তমানে ফেরি ছাড়াও দোয়েল পাখি-১, এমভি পারিজাত নামে দুটি লঞ্চ, কুতুবদিয়া নামে একটি জাহাজ ও একটি সি-ট্রাক চলাচল করছে।

এছাড়া অনুমতি না থাকলেও অবৈধভাবে চলাচল করছে বেশকিছু ট্রলার ও স্পিডবোট। সব ধরনের নৌযানেই প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ন্যূনতম ১৫০ টাকা। অথচ বিআইডব্লিউটিএর নিয়মানুযায়ী কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা হিসেবে রুটটির ২৬ কিলোমিটারের ভাড়া হওয়ার কথা ৪৫ টাকার মতো।

এ হিসেবে রুটটিতে তিন গুণেরও বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এছাড়া লঞ্চ ও জাহাজে আপার লেভেল, ভিআইপি সিট ও কেবিনের জন্য গুণতে হচ্ছে আরো অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলকারী এমভি দোয়েল পাখি-১ লঞ্চের মালিক আফসার উদ্দিন দাবি করেন, তারা নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছেন।

কোনো যাত্রীর কাছ থেকে ১ টাকাও বেশি নেয়া হচ্ছে না। একই দাবি করেন এমভি পারিজাত লঞ্চের মালিক পক্ষের নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা নির্ধারিত চার্ট অনুসারে ভাড়া নিয়ে থাকি। তবে তারা কেউই সরকারিভাবে ১৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণের কোনো তালিকা বা চার্ট দেখাতে পারেননি।

বিআইডব্লিউটিএর ভোলা অঞ্চলের পরিবহন পরিদর্শক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা মো. নাসিম আহমেদ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা স্বীকার তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী ৪৫ টাকা ভাড়া নিলে লোকসানের অভিযোগ করেন লঞ্চ মালিকরা।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পর এক বছর আগে রুটটির ভাড়া ৮০ টাকা করা হয়েছিলো। তবে কয়েক দফায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ভাড়া বাড়িয়ে বর্তমানে ১৫০ টাকা করেছেন। বিষয়টি আমরা অবগত হলেও এখন পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি।

অতিরিক্তি ভাড়া আদায় সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া থেকে বেশি নিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

নতুনসময়/আল-এম