ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে নজিরবিহীন রেকর্ড

একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় নজিরবিহীন রেকর্ড হতে চলেছে দেশে। বিকৃত রুচির মানুষ রূপি কিছু অমানুষের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোমলমতি শিশু থেকে বয়স্ক নারী। সমগ্র দেশটাই আজ নারী ও শিশুর জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে। চলতি বছরের গত সাড়ে তিন মাসে ৩৯৬ জন নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৩৯টি এবং হত্যা মামলা হয়েছে ৩৫১টি। বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে সারা দেশে ৪৭ শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ৪৭ শিশুর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩৯ জন। শিশু ধর্ষণের ঘটনায় শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
সাম্প্রতিক ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ফেনীর নুসরাতের পর রাজধানীর মুগদার হাসি। একজন মাদ্রাসাছাত্রী, অপরজন গৃহবধূ। দুজনই কেরোসিনের আগুনের নির্মম বলি। মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে ঘটেছে আলোচিত এই দুই ঘটনা। তবে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার দাবি, বিচারহীনতার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের তিন মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৬৪ জন শিশু। এ সংখ্যা জানুয়ারিতে ছিল ৫২, ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয় ৬০ এবং মার্চে ফের ৫২ জনে দাঁড়ায়। গত তিন মাসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৯ জন। এর মধ্যে ৭ জন প্রতিবন্ধী শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণচেষ্টা হয়েছে ৮ জনের ওপর। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১২ জনকে। এ ছাড়া অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে ১১ জনকে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার ১৬ জন। ২০১৮ সালে প্রতিদিন গড়ে ১৩ শিশু নির্যাতন, দুই শিশু ধর্ষণ এবং এক শিশু হত্যার শিকার হতো। ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণ-গণধর্ষণ বেড়েছে অন্তত ৩৪ শতাংশ। সংস্থাটি বলছে, এর বাইরেও বহু অপরাধের ঘটনা নিত্যদিনই ঘটে। সেসব ঘটনা রেকর্ডহীন বলে স্থান পায় না থানার হিসাবে। চাইল্ড পার্লামেন্টের নিজস্ব জরিপে এসেছে, গত বছর ৮৭ শতাংশ শিশুই কোনো না কোনো যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গণপরিবহনেই নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫৩ শতাংশ। কর্মজীবী ও গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। শিশুদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০১৮ সালে ২৯৮ শিশু আত্মহত্যা করে, ২০১৭ সালে এ সংখ্যাটি ছিল ২১৩। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণসহ নানা সামাজিক অপরাধ আগেও ঘটেছে এখনো ঘটছে। বর্তমান সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অনেক শক্তিশালী করা হয়েছে, তবুও এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এসব অপরাধ দমনে আইনের সঠিক প্রয়োগ করা প্রয়োজন। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। সেটি করতে না পারলে এ অস্থিরতা চলতেই থাকবে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছে ১৮ জন নারী। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫ জন। নির্যাতনের পর আত্মহত্যা করেছে ১ জন। নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে। অ্যাসিডসন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৫ জন। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র দুটি। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে হত্যা করা হয়েছে ৬৯ জন শিশুকে। এর মধ্যে মামলা হয়েছে ৩২টির। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, সামাজিক নীতি-নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের অভাবে খুন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে।
নতুনসময়/এনএইচ