ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২

ঢাবি’র ১শ’ শিক্ষার্থীর তথ্য চায় সিআইডি


৪ মার্চ ২০১৯ ০৬:০৮

প্রতিকী ছবি

ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস, ডিজিটাল জালিয়াতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহায়তাকারী এমন ১শ’ শিক্ষার্থীর তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত শাখা (সিআইডি)। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বরাবর এক চিঠিতে এসব শিক্ষার্থীর বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়। সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাশের স্বাক্ষর করা ওই চিঠিতে বলা হয়, শাহাবাগ থানায় ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর হওয়া ২৬ নম্বর মামলার সূত্রে এজহারনামীয় এবং তদন্তে প্রাপ্ত গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রদত্ত ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তের স্বার্থে সংযুক্তি তালিকা-১ এ উল্লিখিত শিক্ষার্থীদের তথ্য পাওয়া একান্ত প্রয়োজন। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর সিআইডি বাদী হয়ে মামলাটি করে।

সিআইডির চাওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ নাম, ঠিকানা, শিক্ষাবর্ষ, ইউনিট, বিষয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল, সেমিস্টারভিত্তিক পরীক্ষার ফলাফল এবং পুনঃভর্তির বিস্তারিত।

রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের তথ্য চাওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৩ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ৯ জন, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৮জন, অর্থনীতি বিভাগের ৫জন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৫জন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪জন, আইন বিভাগের ৪জন, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের ৪জন, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ৩জন, ফার্মেসি বিভাগের ৩জন, বাংলা বিভাগের ৩জন, বিশ্ব ধর্মত্বত্ত এবং সংস্কৃতি বিভাগের ৩জন, ফলিত রসায়ন বিভাগের ২জন, ইতিহাস বিভাগের ২জন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২জন, ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইলেট্রনিক্স বিভাগের ২জন, ফিন্যান্স বিভাগের ২জন, মার্কেটিং বিভাগের ২জন, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র বিভাগের ২জন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের ২জন, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২জন এবং সংস্কৃতি বিভাগের ২জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ বৈকল্য, একাউন্টিং, ইংলিশ ফর আদার ল্যাংগুয়েজ, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান এবং পালি বিভাগসহ আরও বেশ কিছু বিভাগের শিক্ষার্থীর তথ্যও চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার এনামউজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে একটি চিঠি এসেছে। সেখানে সিআইডি ভর্তি জালিয়াতি সংক্রান্ত ঘটনায় কিছু শিক্ষার্থীর বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।

 এদিকে সিআইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁস এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় এ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত ৪৬ জনসহ প্রায় ১৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করেছে সিআইডি। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আদালতে এই অভিযোগ পত্র দাখিলের সম্ভাবনা রয়েছে।

 উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রিন্টিং প্রেস থেকে পরীক্ষার আগের রাতে এবং পরীক্ষার দিন কেন্দ্র থেকে একটি চক্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করে আসছে। কর্তৃপক্ষের অস্বীকার এবং এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতার মধ্যেই সিআইডির অভিযান এবং গণমাধ্যমে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এসব ঘটনায় জালিয়াত চক্রের সদস্য এবং অসুদুপায় অবলম্বন করে ভর্তি হাওয়া শিক্ষার্থীদের বহিঃস্কারের দাবিতে আন্দোলনেও নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরই জানিয়ে এসেছে, মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, যাদের নাম গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসেছে এবং আমরা তদন্তে যাদের সন্দেহ করছি তাদের বিষয়ে জানতে চেয়েছি। এ মামলায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সম্প্রতি বিপিএম (সেবা) পদক পাওয়া মোল্লা নজরুল আরও জানান,আমরা তদন্ত মোটামুটি গুছিয়ে এনেছি। তথ্যগুলো পেলে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারব যে, কে কতটুকু জড়িত। ভর্তি জালিয়াতিতে যারাই থাকুক তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট করব এবং গ্রেফতার করব।

নতুন সময়/এসইউএ