বিমানে লুটপাট চালিয়েছে রাশেদ মেহের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ কর্মকর্তা
-2024-08-11-09-26-30.png)
# ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপসের অদৃশ্য হাতের ইশারায় ছিল বেপরোয়া, পালিয়ে যাওয়াতেও সহায়তার অভিযোগ
# পালিয়েছেন ডেপুটিশনে আসা অ্যাডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তারা, বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিষ্টার ফজলে হোসেন তাপসের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে বিমানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হওয়ার পরও তার অদৃশ্য কালো হাতের শক্তিতে বিমানে গড়ে উঠেছিল পঞ্চপান্ডবের সিন্ডিকেট। নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও কেনাকাটায় এই পঞ্চপান্ডবের সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রন করতো। গত ১০ বছরে এই সিন্ডিকেট বিমান থেকে লুটে নিয়েছে হাজার কোটি টাকার ওপরে। সিন্ডিকেটের অন্যতম নেতা হলেন বিমানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আইন রাশেদ মেহের চৌধুরী। বাকিরা হলেন, আইটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল হক, প্রকল্প ও পূর্ত বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তারেক আলমগীর, কর্পোরেট ও কোয়ালিটি বিভাগরে মহাব্যবস্থাপক নিরঞ্জন রয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি’র) সাবেক অধ্যক্ষ নজমুল হুদা লেবু। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে পঞ্চপান্ডব রয়েছে বিমানে এদের সেই আদলে পঞ্চপান্ডব ডাকা হয়। এই পঞ্চপান্ডবদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার প্রকাশ্য বিক্ষোভ করে বিমানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বিমানের অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই আর অফিসে আসেননি। কর্মীদের জনরোষে পড়ার আশঙ্কায় তারা গা ঢাকা দিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাশেদ মেহের চৌধুরী ডেপুটিশনে আসা বিমানের অ্যাডমিন কর্মকর্তাদের ব্যারিষ্টার তাপসের ক্ষমতাবলে তাদের সঙ্গে হাত করে নিতেন। আর এই সিন্ডিকেটটি বিমানের পুরো নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি সবকিছু নিয়ন্ত্রন করতেন। ব্যারিষ্টার তাপসের ইশারা ছাড়া এ ধরনের কোন ফাইল নড়াচড়া হতো না। বিমানের ফ্লাইট কেনা থেকে শুরু করে সমস্ত কেনাকটায় এই সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রন করতো। প্রায় ১০ বছরে নিয়োগ, কেনাকটা, পদোন্নতি ও পদায়ন বাণিজ্য করে সিন্ডিকেটটি হাজার কোটি টাকা বাণিজ্য করেছে। রাশেদ মেহের চৌধুরী বিমানের নিজস্ব কর্মী হওয়া সত্বেও বিমানের কর্মীদের নাজেহাল এমনকি চাকুরিচ্যুত করিয়েছেন। তাকে বিধি বহির্ভুতভাবে আনুষ্ঠানিক কোন ধরনের ইন্টারভিউ ছাড়া ব্যবস্থাপক আইন পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এই দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি কুৎসা রটিয়ে ও ব্যারিষ্টার তাপসের ক্ষমতাবলে আইন বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আজরা নাসরিন রহমানকে চাকরি হতে অব্যাহতি দেয়ার পেছনে মূল কৃড়ানক হিসেবে ভুমিকা পালন করেন। তারই কারণে যোগ্যতা থাকা সত্বেও বিমানের প্রকিউরমেন্ট ও লজিস্টিক সাপোর্ট মমিনুল ইসলামকে চাকরিচ্যুতি করে ফেলেছিলেন। পরবর্তীতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে মেধাবী এই অফিসারকে আবারো চাকুরি ফেরতের নির্দেশ দেন উচ্চ আাদালত। উচ্চ আদলতের রায়ও কার্যকরেও কালক্ষেপন করেন রাশেদ মেহের চৌধুরী। এক পর্যায়ে উপায়হীন হয়ে লজিস্টিক ও প্রকিরমেন্টের পরিচালক বানানো হয়। অথচ তিনি আরও উচ্চ পদের জন্য যোগ্য ছিলেন। এছাড়াও বহু কর্মচারীর চাকরি স্থায় হতে দেননি। ১০/১২ বছর চাকরি পরও তারা দৈনন্দিন হাজিরা ভিত্তিতে রয়েগেছেন।
ভুক্তভোগী নাজমুল বলেন, আমাকে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুতির প্রতিবাদে আদালতে স্মরানাপন্ন হয়। পরে আদালতের রায়ে চাকুরি ফিরে পেতে আসলে নানাভাবে হয়রানী করা হয়। পরে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দেয়ার কারণে আজ পর্যন্ত চাকুরী হয়নি। আমার সঙ্গে আরো ৬/৭ জনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। পরে তাদের নিকট থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে চাকুরি দেয়া হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, রাশেদ মেহের চৌধুরীসহ তাদের সিন্ডিকেট পুরো বিমানকে লুটপাট করেছে। আমরা এখন তাদের প্রতিরোধ করবো।
অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেটটিই মূলত পুরো বিমানের প্রভাব রেখেছে। তারাই অ্যাডমিন ক্যাডারের কাজগুলো সম্পাদন করে নিতেন। আর পেছনে ভূমিকা ছিল ব্যারিষ্টার তাপসের। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ঠিক আগ মুহুর্তে দেশ ছাড়েন ব্যারিষ্টার তাপস। তাকে পালাতে বিমানের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগীতা করেন রাশেক মেহের চৌধুরী।
মূলত তাদের অমানুষিক নির্যাতনের কারণে আওয়ামী সরকারের পতনের পর ফুঁসে উঠেছে বিমানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। আর তাদের রোষানল থেকে বাঁচতেই বিমানের এমডি জাহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছেন। গত বৃহস্পতিবার বিমানের ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ডেপুটেশনে আসা কর্মকর্তাদের পদত্যাগ, লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের ডিজিএম মো. রাশেদ মেহের চৌধুরীর প্রত্যাহার দাবি করেন। প্রায় ৩ হাজার অস্থায়ী কর্মচারিদের চাকরি স্থায়ী করার দাবি করা হয়।
বিক্ষোভরতদের দাবি হচ্ছে, বিদ্যমান বৈষম্য দুর করা, অস্থায়ীদের অবিলম্বে স্থায়ী করা, বিমানের দুই-তৃতীয়াংশ কর্মচারি হচ্ছে গ্রাচুইটি হোল্ডার তাদের পেনশন দেয়া, করোনকালীন সময়ে যে টাকা কর্তন করা হয়েছে তা ফেরত দেয়া, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারন, ডেপুটেশনে আসা কর্মকর্তাদের অপসারন।
বিক্ষোভের সময় তারা বিমানের চিফ ফাইন্যানশিয়াল অফিসার (সিএফও) মো. নওশাদ হোসেন ও লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের ডিজিএম মো. রাশেদ মেহের চৌধুরীকে অবরুদ্ধ করেন। রোষের মুখে একপর্যায়ে তারা পালিয়ে অফিস ছাড়তে বাধ্য হন।
বিক্ষুব্ধ বিমানকর্মীরা জানান, বিমানের সিএফও দীর্ঘদিন ধরে বিমানে অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রভাবে খুবই বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিলেন। এখন তাদের আর বিমানে থাকার অধিকার নেই। আমরা তাকে অফিস করতে দেব না।