ঢাকা রবিবার, ২৪শে আগস্ট ২০২৫, ১০ই ভাদ্র ১৪৩২


আন্তর্জাতিক স্বার্থের জটিল সমীকরণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, কৌশলগত উদ্যোগের তাগিদ বিশ্লেষকদের


২৪ আগস্ট ২০২৫ ০৯:৫৩

সংগৃহীত

২০১৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। আট বছর আগে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও রাখাইনদের নির্যাতনে নিজভূমি ছাড়তে বাধ্য হয় তারা।

 

এদিকে, নিজ দেশে ফেরার বিষয়ে এখনো দ্বিধা বিভক্ত রোহিঙ্গারা। একপক্ষ যেকোনো মূল্যে ফিরে যেতে চান। তবে অপরপক্ষ জীবনের নিরাপত্তা ও মৌলিক চাহিদার নিশ্চয়তা ছাড়া ফিরতে চান না।

 

এ বিষয়ে একজন রোহিঙ্গা বলেন, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে আমরা আমাদের দেশে ফিরতে চাই। অপর একজন বলেন, আমরা গৃহহীন হয়ে পড়েছি। আমাদের ওপর চালনো গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচার হতে হবে।

 

রোহিঙ্গাদের এমন উদ্বেগের সঙ্গে একমত অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগে কিছু শর্ত পূরণ না হলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া টেকসই হবে না।

 

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেছেন, ১৯৯৫ সালে পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ মিয়ানমারে ফেরত গিয়েছিল। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আবারও কিছু কিছু করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ফেরত এসেছে। এতে দেখা যায় তখনকার প্রত্যাবাসনও টেকসই হয়নি।

 

তবে নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এখন আর শুধু বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে না। একদিকে মিয়ানমার সীমান্তের বেশিরভাগই দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। অন্যদিকে, রাখাইন অঞ্চলে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থ জটিল হচ্ছে।

 

যেমন রাখাইনের রাজধানী সিটওয়ে বন্দর হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে দিল্লি। আবার চীন সিটওয়ে থেকে মাত্র ১২০ কিলোমিটার দূরের চকপিউ বন্দর হয়ে কুনমিং পর্যন্ত বাণিজ্য রুট তৈরি করেছে।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, আরাকানের রাখাইন স্টেটে বড় বড় শক্তিগুলো জড়িত। সেখানে চীনের বড় স্বার্থ রয়েছে। কারণ গভীর সমুদ্রবন্দর দেশটির কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মালাক্কা ও দক্ষিন চীন সাগরে দেশটির জন্য যে বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছে তা থেকে পরিত্রান পেতে পশ্চিম মিয়ানমারের সমুদ্রবন্দরের দিকে নজর চীনের। সেই সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর দিয়ে অবাধে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় জাহাজ পাঠাতে পারবে চীন। এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রও জানে।

 

অপরদিকে, এত সমীকরণের মাঝেও বাংলাদেশের শীর্ষ নীতি নির্ধারকরা বেশ কয়েকবার আরাকান আর্মিসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। কিন্তু তাতেও খুব একটা ইতিবাচক ফল হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো সুযোগ আছে প্রত্যাবাসনের। তবে এর জন্য বাংলাদেশকে নিতে হবে কৌশলগত কিছু উদ্যোগ।

 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) শাহিদুল হক বলেন, আসিয়ান কখনো রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলতো না। কিন্তু এবার তারা প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। এটা একটি বড় বিষয়। মিয়ানমার শুধু আসিয়ান ও চীনের কথা শোনে। কিন্তু আমরা চায়নার সাথে এ বিষয়ে তেমন আলোচনা করিনি।

 

এখন মোটাদাগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কতটা আস্থায় নিতে পারবে বাংলাদেশ, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

 

প্রসঙ্গত, এর আগে অন্তত দুইবার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু নির্যাতনের শিকার হয়ে ফের তারা বাংলাদেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছে। তাই এবার স্থায়ী সমাধান চান রোহিঙ্গারা। তবে সেক্ষেত্রে তাদের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।