নিরাপত্তা দুর্বলতায় বিমানের চাকা ও তেল চুরি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চাকা ও তেল চুরির ঘটনায় তিন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হলেও নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। শাহজালালের সংরক্ষিত এলাকার ভেতরে কীভাবে এয়ারলাইন্সের চাকা চুরি হয় এমন প্রশ্ন চারিদিকে। এছাড়াও শাহ আমানতে বিমানের এক কর্মীর তেল চুরির ঘটনাও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এসবের কারণে বিমানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (প্রশাসন) মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা আছে বলে মনে করি না। কিন্তু এসব ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা আরও সতর্ক হচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ওই দুই জনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধিতেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজে ব্যবহৃত ১০টি চাকা ‘চুরি করে’ অন্য একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে দেওয়ার অভিযোগ উঠে বিমানের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। গত সোমবার (১৮ আগস্ট) বিমানবন্দর থানায় এ ঘটনায় একটি জিডি করেন বিমানের সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মোশারেফ হোসেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, শনিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১০টি ‘আনসার্ভিসেবল টায়ার’ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার কমপ্লেক্সের পাশে থাকা অকশন শেড থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আরও উল্লেখ করা হয়, চাকার সন্ধান না পাওয়ায় বিমানের ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট সুপারভাইজার আরমান হোসেন ও স্টোর হেলপার সামসুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে জানা যায়, দেশের একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার এক কর্মকর্তাকে ১০টি চাকা ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এটি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হলে গত ২১ আগস্ট এই দুই কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এদিকে চট্টগ্রামে কর্মরত সিডিউলিং কর্মকর্তা গোলাম মো. আমানুল্লাহ হকের বিরুদ্ধে বিমানের তেল চুরির অভিযোগে গত ৯ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে তার বিরুদ্ধে বিমানের প্রায় ১৩ লাখ টাকার তেল বিক্রির অভিযোগের তদন্তের সত্যতা পায় মর্মে উল্লেখ করা হয়। এ কারণে কেন তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে না, সেই জবাব জানতে চাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকেও চাকরিচ্যুত করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এয়ারক্র্যাফটগুলোর নানা ত্রুটিতে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। এমন অবস্থায় চুরির বিষয়গুলো সামনে আসায় বিমানের মান-মর্যাদা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও বিষয়টি ধরা পড়ায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তারপরও চুরির দায় তো তাদের থাকছে।
বিশেষজ্ঞ খায়রুল কবির ভুঁইয়া বলেন, ‘চুরি করলে ধরা পড়বে না, এমন অবস্থায় বিমানের ওই দুই কর্মকর্তা চুরিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে চুরি করেছেন। আমার প্রশ্ন এসব স্পর্শকাতর স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন এত দুর্বল থাকবে। যেহেতু বিমানের যন্ত্রাংশ অনেক উচ্চমূল্যের সেহেতু এগুলো সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকাই উচিত।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিমানে বর্তমানে যে কাণ্ডগুলো ঘটছে এয়ারলাইন্স হিসেবে সেগুলো শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও ব্যাপকভাবে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কর্মকর্তাদের উচিত হবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করা। আর এসব কাণ্ডে আরও যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মাসুদ খান বলেন, ‘বিমানে যখনই কোনও অনাকাঙিক্ষত ঘটনা ঘটে, বিমান কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। কোনও অবস্থাতেই অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রেও আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি বিমানের হ্যাঙ্গার এলাকায় আরও অধিকতর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’