ঢাকা শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত হোক, অসৎতার প্রমান পেলে পদত্যাগ করবো


২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪৬

- সেলিনা বানু, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পাসপোর্ট অধিদপ্তর

পাঁচশ’ মাল্টিপোল পাসপোর্ট দেয়া এটি কল্পনাপ্রসূত খবর। এ সকল পাসপোর্টের ফাইল, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার রশিদসহ নানা কাগগজপত্র প্রয়োজন হয়। কিন্তু এর কোন কিছুই নেই। তাহলে এ খবর কেমন করে প্রকাশ হলো। গত তিন মাসেও লিগ্যাল প্রসেসেও এ ধরনের কোন পাসপোর্ট হয়নি। আর গোপনে তো হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।

সম্প্রতি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানুকে নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদে পরিপ্রেক্ষিতে এমন কথা বলেছেন তিনি।


তিনি বলেছেন, মিথ্যাচারের একটি সিমা থাকা দরকার। এ ধরনের সংবাদ মিথ্যাচারের চাইতেও ভয়ঙ্কর। সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ব্যাংকে কত টাকা আছে, চাকরি জীবনে সৎ ছিলাম না অসৎ ছিলাম এটি তদন্ত করলেই প্রমান পাওয়া যাবে।

রোববার অধিদপ্তরের তার নিজের দপ্তরে আলোচিত এ বিষষ নিয়ে কথা হয় ডেইলি ম্যাসেঞ্জারের সঙ্গে। আলোচনায় উঠে আসে তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের প্রসঙ্গ।

সেলিনা বানু দাবি করেন, তার ৩০ বছরের চাকরি জীবনে কোন অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেননি। সৎ ভাবেই তিনি তার চাকরি জীবন অতিক্রান্ত করেছেন। শেষ দিকে এসে এ রকম একটি প্রতিবেদন তার কর্মময় জীবন শুধু ম্ল্যানই করেননি সামাজিকভাবে অনেক হেয়প্রতিপন্ন করেছে। জীবনে যেখানে একটি পয়সাও অন্যায়ভাবে আয় করিনি সেখানে কোটি কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। যা শুধু আমার কাছে কল্পনাময়।

সেলিনা বানু বলেন, আমার ব্যাংকে কতটাকা আছে এটি তো দিনের মতই পরিস্কার। এমনকি আমার আত্নীয় স্বজন বা সন্তানদের ব্যাংকেও কতটাকা আছে সেটিও পরিস্কার। এখানে লুকোচুরির কিছু নাই বা গোপন করার কিছু নাই। অথচ প্রতিবেদনে বলা হলো ৭ কোটি টাকার কথা। কোথায় কিভাবে কারা আমাকে এ টাকা দিলো তার ডকুমেন্টস বা প্রমান স্বরুপ না দেখেই এ রকম মিথ্যা প্রতিবেদন কেন করা হলো সেটি আমার বোধগম্য নয়।

তিনি বলেন, এ ঘটনার আমি সুষ্ঠ তদন্ত চেয়েছি। তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু পরিস্কার হবে বলে আমি বিশ^াসও করি।

অনেকটা আবেগ প্রবণ হয়ে সরকারী জেষ্ঠ্য এ কর্মকর্তা বলেন, যেখানে আমার কোন বাড়ি বা ফ্ল্যাট পর্যন্ত নেই, নেই কোন গাড়ি, আমার সন্তানরা রিকশা করে স্কুল কলেজে গেছে সেখানে আমার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয়ের কথা বলা হলো নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। সরকারী অনেক সংস্থাই আছে যারা এগুলোর তদন্ত বা অনুসন্ধান করে আমি তাদের আমন্ত্রন জানিয়েছি তারা তদন্ত করুক। খোঁজ নিক আসল সত্য বের করুক।

এক প্রশ্নের তিনি বলেন, ভেরিফিকেশন কেন হয় ? ভেরিফিকশনের মাধ্যমে যাচাই বাছাই হয় যে ব্যক্তি পাসপোর্টের আবেদন করেছেন তার সকল তথ্য সঠিক আছে কি না। তথ্য সঠিক থাকলে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি পাসপোর্ট পাবেন।

আর একজন ব্যক্তি পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করলে সেটির জন্যও তদন্ত হয়। কি কারণে তিনি পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করে নতুন পাসপোর্ট নিতে চান তার সঠিক ব্যখ্যা দিলে সেটি যদি যথাপোযুক্ত হয় তবে তিনিও পাসপোর্ট পাবেন। আর কেউ যিদি গোপনে করতে চান অর্থাৎ একটি পাসপোর্ট রয়েছে সে আরও একটি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে সেটি আসলে পাসপোর্ট পাওয়ার যে প্রক্রিয়া রয়েছে সেটিতে আটকে যাবেন। এখানে কোন ধরনের গোপনীয়তার সুযোগ নাই।

তিনি বলেন, লিগ্যাল ওয়েতেই পাসপোর্ট পেতে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ডিজি এডিজির নিকট আসে। সেক্ষেত্রে যা হয় সকল নিয়মকানুন মেনেই সম্পন্ন হয়।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তা -কর্মচারীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কে অভিযোগ করলেন তার নাম পরিচয় নেই। এখন যদি কেউ আমার নিকট থেকে অবৈধ সুবিধা নিতে আসেন, আমি যদি তাকে না দেই তাহলে সে আমার বিরুদ্ধে নানা কথা বলবে। সেই কথাগুলো সত্য কি না, সেটি যাচাই করতে হবে। এ অধিদপ্তরে ৩০ বছর চাকরি করছি । একজন কর্মকর্তা হিসেবে সবার মন জুগিয়ে চলা কি সম্ভব। হয়তো কেউ তার পছন্দেও জায়গায় বদলির জন্য আবেদন করেছেন সেটি তার হয়নি। এ জন্য আমাকে দোষারোপ করলে এটি কি ঠিক হবে ?

পারিবারিক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমি কি সরকারী আদেশের বাইরে যেতে পারি। কে কি করলো সেটি তো আমার বিষয় নয়। আমি সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে কি করলাম সেটি বিবেচ্য বিষয়। আমি মনে করি যে বিষয়গুলো নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তা সরকারী সংস্থা তদন্ত করুক। আমার বিরুদ্ধে ৭ কোটি টাকা ঘুষের বিষয় প্রমান করতে পারলে আমি পদত্যাগ করবো। আর এ কারণে আমার যে শাস্তি হবে সেটিও মেনে নেব।