ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩২

রাজশাহীতে পুকুর গিলে খাচ্ছেন কৃষক লীগ নেতা লালন


১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪৫

লালবৃত্ত চিহ্নিত কৃষক লীগ নেতা লালন

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের কঠোর হুঁশিয়ারি সত্বেও নগরীর মেহেরচন্ডি এলাকায় পুকুর গিলে খাচ্ছেন লালন শেখ নামের এক কৃষক লীগ নেতা। বিভিন্ন স্তরের নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অনেকটাই ফ্রি স্টাইলে পুকুর ভরাট করে চলেছেন। অথচ কয়েকদিন আগে একই স্থানে পুকুর ভরাটের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল। সেই জরিমানাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অবাধে পুকুর ভরাট করে চলেছেন।

এ বিষয়ে চন্দ্রিমা থানার ওসি মাহবুব আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পুকুর ভরটের খবরে আমিই বিষয়টি প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলে খবর দেই। তারাই এসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করে। এখন আবার যদি সে এ কাজ করে তাহলে পুরোপুরি আদালত অবমাননার শামিল। আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

জানা যায়, রাজশাহী মহানগরে দেড় একর আয়তনের একটি পুকুর এখনো আস্ত রয়েছে। পুকুরটি রাজশাহী মহানগরের চন্দ্রিমা থানার মেহেরচণ্ডী মৌজায়। আরএস খতিয়ান নম্বর ৪৮৮ এবং দাগ নম্বর ২৪৭৮। পরিমাণ ১ দশমিক ৫০০০ একর। পুকুরের শ্রেণি ‘ভিটা’ বলে মালিকপক্ষ ভরাট করছিল। গত ২৫ মার্চ রাত থেকে প্রতি রাতে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছিল। অথচ পুকুরটি এখনো ৩ বছরের জন্য এক ব্যক্তির কাছে ইজারা দেওয়া রয়েছে। ইজারাদার প্রথম দিকে থানায় অভিযোগ করেছিলেন। পরে তাদের সিংহভাগ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে তারা থেমে গেছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) ২০১০ অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে জলাধার-সম্পর্কিত বিধিনিষেধ শিথিল করা যেতে পারে। অন্যদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর বিধান অনুসারে ব্যক্তিগত পুকুরও জলাধারের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তা ভরাট করা যাবে না। অথচ পুকুর ভরাটকারীরা ‘ডিসি ও এসপি’র নাম ভাঙিয়ে পুকুরটি ভরাট করছিলেন।

এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই দিন রাতেই প্রশাসনের পক্ষ থেকেই পুকুর ভরাট বন্ধে অভিযান চালানো হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে অংশ নেন রাজশাহী পরিবেশ অধিপ্তরের পরিদর্শন নীল রতন সরকার ও মহানগর পুলিশের পাঁচ সদস্য।
ওই দিন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অবৈধ পুকুর ভরাট বন্ধে রাজশাহী জেলা প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান নিয়েছেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক লীগ নেতা লালন শেখ ভ্রাম্যমান আদালতের আদেশ এমনকি জেলা প্রশাসনকে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ করেই পুকুর ভরাটের কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, দলের প্রভাব খাটিয়ে লালন এখন পুকুর খেকো লালনে পরিনত হয়েছে। কিছু বলতেই গেলে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে তারা আবারো প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।