ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

মেট্রোরেলের ওয়ার্কশপে রহস্যময় ডাকাতি, মামলা দায়ের


৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫৫

প্রতিকি

মেট্রোরেলের কাজে নিয়োজিত চায়না সিনো হাইড্রো কোম্পানির ওয়ার্কশপে রহস্যময় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় প্রায় ২১ লাখ ৫২ হাজার টাকার মালপত্র নিয়ে যায় ডাকাতরা। তবে ডাকতির সময় শ্রমিকদের কোন মোবাইল নেয় নি তারা।

গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়কের বোট ক্লাবের উল্টোপাশে এমন ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পরদিন বুধবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর রূপনগর থানায় সিনো হাইড্রোর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. মাসুদকে সঙ্গে নিয়ে থানায় গিয়ে মামলা করেন মিস্ত্রি মো. মনজু মিয়া।

তবে ওয়ার্কশপে ডাকাতির বিষয়ে কিছুই জানে না মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়কের বোট ক্লাবের উল্টোপাশে মেট্রোরেলের কাজে নিয়োজিত চায়না সিনো হাইড্রো কোম্পানির ওয়ার্কশপে হানা দেয় একদল ডাকাত। প্রথমে নিরাপত্তারক্ষী ও পরে সেখানে অবস্থানরত শ্রমিকদের বেঁধে ফেলে তারা। এরপর প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে চলে লুটপাট। তবে এই দীর্ঘ সময়ে বাইরে থেকে ঘটনা টের পায়নি কেউ। রহস্যজনকভাবে ডাকাতির আগে খুলে ফেলা হয় ওয়ার্কশপের সিসিটিভি ক্যামেরা।

ডাকাতির এ ঘটনায় শুরুতে প্রথমে মামলা নিতে চায়নি পুলিশ। তুরাগ ও রূপনগর থানার ঠেলাঠেলিতে কেটে যায় এক দিন। এরপর বিষয়টি গড়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার পর্যন্ত। তিনি ম্যাপ দেখে রূপনগর থানাকে মামলা নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এতে ঘটনার এক দিন পর মামলা নেয় রূপনগর থানা পুলিশ।

মামলার এজাহারে মো. মনজু মিয়া বলেছেন, ‘গত ২ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ৮ থেকে ১০ জন ডাকাত ছুরি, চাপাতি, দেশি অস্ত্রসহ ওয়ার্কশপে ঢুকে পড়ে। তারা গেটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা চান মোহনকে হাত-পা বেঁধে সবাইকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় সবার কাছে থাকা আনুমানিক ১ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। ডাকাতরা সবাই বরিশাল এবং ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। তারা সবাই লম্বা প্রকৃতির, একজন মোটা এবং অন্যরা ৫ ফুট ৬ থেকে ১০ ইঞ্জির মতো লম্বা। ডাকাতদের মধ্যে দীর্ঘকায় দেহের ডাকাতকে সবাই ‘স্যার, স্যার’ ডাকে এবং আমাদের বলে, আমরা থানা থেকে এসেছি।

এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওয়ার্কশপের ভেতরে একটি গাড়ি ঢোকার শব্দ শুনতে পান শ্রমিকরা। এর কিছুক্ষণ পরপর ওয়ার্কশপের ভেতরে কিছু ভাঙার এবং গাড়িতে মালপত্র তোলার শব্দ শুনতে পান। এভাবে ডাকাতরা রাত ১১টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত ওয়ার্কশপের ভেতরে ডাকাতি করে চলে যায়। চলে যাওয়ার সময় সব শ্রমিককে একটি কক্ষে আটকে দরজার সিটিকিনি বাইরে দিয়ে আটকে রেখে যায়। এ সময় তারা শ্রমিকদের বলে যায়, আমরা চলে যাচ্ছি, তোদের সবার মোবাইল ফোন একটি রুমের ভেতরে আছে, আমরা তোদের মোবাইল নেব না, নিলে ধরা খেয়ে যাব।’

মামলার এজাহারে মনজু মিয়া আরো উল্লেখ করেছেন, ‘ডাকাতরা চলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে, আমরা মুখ দিয়ে একে অন্যের বাঁধন খুলি এবং রুমের সিলিং দিয়ে অন্যরুমে গিয়ে আমাদের দরজার বাইরে দিয়ে লাগানো সিটকিনি খুলে সবাই বাইরে বের হয়ে আসি। এরপর একটি রুমের ঝুড়ির ভেতর আমাদের সবার মোবাইল দেখতে পাই।’

মামলায় লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী ডাকাতি হওয়া মালপত্রের মধ্যে রয়েছে এক লাখ আশি হাজার টাকা মূল্যের ১৮টি ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের ব্যাটারি, ৪ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের গাড়ির ও ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, প্রায় ১২ লাখ টাকা মূল্যের দুই ধরনের কপার স্ট্যান্ডার্ড ওয়াব ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২ হাজার ৫৯২ পিস মিডিল ক্লাম (সাইজ ৬০ মিমি), ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকার ৫ হাজার ৭৬০টি ইনডক্লাম, ৪ হাজার ৩৯৮ টাকার ১ হাজার ৬১৬ পিস বোল্ট, ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ব্যাটারি চার্জার, ৩৫ হাজার টাকার ওয়েল্ডিং মেশিন এবং কর্মচারীদের কাছে থাকা নগদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ২১ লাখ ৫২ হাজার টাকার মালপত্র নিয়ে গেছে ডাকাতরা।

শ্রমিকদের তথ্যমতে, ডাকাতির সময় সেখানে তারা মোট ১০ জন ছিলেন। এর মধ্যে একজন গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে, দুজন ছিলেন নামাজে আর বাকি সাতজন ছিলেন দুটি রুমে। ডাকাত দল প্রথমে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে ওয়ার্কশপের ভেতরে ঢোকে। এরপর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রহরী এবং দুই রুমে থাকা সাতজনকে বেঁধে ফেলে। এর কিছুক্ষণ পর নামাজে যাওয়া দুজন ওয়ার্কশপে ঢুকলে তাদেরও বেঁধে ফেলা হয়। এরপর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় মালপত্র।’

জানতে চাইলে রূপনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা একটি ভালো ফলাফল পাব।’

কাউকে শনাক্ত করা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমরা এখন বিস্তারিত বলতে পারছি না। আশা করছি, শিগগির আমরা একটি ফলাফলে পৌঁছাতে পারব। এরপর বিস্তারিত জানাব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘গত বুধবার আমি নিজে ঘটনাস্থল ঘুরে এসেছি। এ নিয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমার কাছে এ মুহূর্তে এর বেশি তথ্য নেই।’

এদিকে ওয়ার্কশপে ডাকাতির বিষয়ে কিছুই জানে না মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সচিব আব্দুর রউফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রূপনগর থানা এলাকায় আমাদের আলাদা কোনো ওয়ার্কশপ নেই। কোম্পানির ওয়ার্কশপ মেট্রোরেল কম্পাউন্ডের মধ্যেই। ডাকাতির বিষয়ে আমরা অবগত নই। এটা ঠিকাদারদের ওয়ার্কশপ হতে পারে।’