ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

গাড়িচালকরা অপহরণ চক্রের হয়ে কাজ করছেন, ডিবির সতর্কতা


৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৩

সংগৃহিত

অপরাধী চক্রের দ্বারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হিমেল অপহরণের ঘটনায় এবার সবাইকে সতর্ক করলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, গাড়ি চালকরা অহরণ চক্রের হয়ে কাজ করছে। ব্যক্তিগত গাড়িচালক নিয়োগ করার আগে সতর্ক হতে হবে।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন তিনি।

ডিবি প্রধান বলেন, হাসিবুর রহমান হিমেলকে অপহরণ করে দীর্ঘ একমাস আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দিয়ে কয়েক কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে আসছিল একটি চক্র। সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সুনামগঞ্জের তাহিপুরের দুর্গম পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয় হিমেলকে। গ্রেফতরা করা হয় অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ ১২ জনকে।

তিনি বলেন, হিমেল অপহরণের ঘটনায় তদন্তে নেমে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে এ অপহরণের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন ব্যক্তিগত গাড়ি চালক সামিদুল। এমনকি বিভিন্ন অপহরণ চক্রের সঙ্গে গাড়ি চালকদের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ।

হারুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল অপহরণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) লালবাগ বিভাগ তদন্ত করছিল। এ মামলার তদন্তে ব্যক্তিগত গাড়িচালক গ্রেফতার করা হয়। এ চালকই অপহরণের মূলহোতা। চালক ছামিদুল ইসলাম যখন গাড়ি চালাতেন তখন তার ভেতরে লোভ জাগে; তার স্যারের মতো নিজের একটি গাড়ি থাকবে।

ছামিদুল প্রথমে তুরাগ এলাকার হানিফ বাবুর্চী নামের এক সাইটের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর পরবর্তী আলোচনা হয় ময়মনসিংহের দোবাউরা থানার ইউপি চেয়ারম্যান মামুনের সঙ্গে। তিনি একাধিকবার চেয়ারম্যান। হিমেলকে অপহরণ করে তার বাসায় রাখার পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে হিমেলকে যখন অপহরণ করে তার বাসায় নেওয়া হয় কিন্তু টাকা পেতে দেরি হওয়ায় মামুন গাড়ি দিয়ে সীমান্ত এলাকায় হিমেলকে পাঠানো হয়। গাড়িতে করে হিমেলকে বর্ডারের একটি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সামিদুল ও মালেক, মোবারক, মানিককে নিয়ে চলে যায়। তখন থেকেই হিমেলের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। পরবর্তীতে ডিবি লালবাগ বিভাগ কাজ শুরু করে।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, পরবর্তীতে ডিবি লালবাগ শরীয়তপুরের চর অঞ্চল থেকে মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়। মাসুদের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ময়মনসিংহের দোবাউরা, নেত্রেকোনা, দূর্গাপুর এরপর তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরে সোর্স নিয়োগ করা হয়। এ সোর্সের মাধ্যমে ডিবি জানতে পারে এ গ্রুপ শুধু অপহরণ করে না, তারা চোরা চালানের সঙ্গেও জড়িত। তারা গরু, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। অপহরণের পর ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করা হয়। যার ছবি ও ভিডিও পাঠানো হতো হিমেলের মায়ের কাছে।

সর্বশেষ তারা ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু এর মধ্যে ডিবির সাঁড়াশি অভিযানের কারণে তারা পেরে উঠতে পারেনি। এ সময়ে অপহরণকারীদেরও টাকা শেষ হয়ে যায়। কারণ ওপারের মেঘালয় পুলিশ, এপারের আমাদের তৎপরতার কারণে এক মাস পাহাড়ে থাকায় টাকা শেষ হয়ে যায়। এ সময়ে তারা টাকার যোগান দিতে গরু চুরি করে বিক্রি করে এরপর সেই টাকা দিয়ে পাহাড়ে অবস্থান করতো। পরে আমরা খবর পেলাম অপহরণকারীরা টাঙ্গুয়ার হাওরে আবারও অন্য একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে। এমন খবর পেয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি নৌকা থেকে হিমেলের গাড়ি চালক সামিদুল, ১৭ মামলার আসামি মালেকসহ চারজনকে গ্রেফতার কার হয়। এ অভিযানে র‌্যাবও সহযোগিতা করে বলেও জানিয়েছেন ডিবি প্রধান।

তিনি বলেন, অপরাধীরা অপহরণের মূল পরিকল্পনা করে তুরাগ থানা এলাকায় বসে। এরপর দোবাউরায় ইউপি চেয়ারম্যানের বাসায় বসে পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্ব ঠিক করা হয়। এ ঘটনায় মামুন ও হানিফ এ ঘটনায় নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আমাদের কাছে তারা স্বীকার করেছে তারা একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। ভুক্তভোগীরা নানা কারণে তাদের টাকা দিয়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ নিয়মিত মোবাইল ট্রাকিংসহ বিভিন্ন ভাবে কাজ করেছে গেছে। পাশাপাশি মেঘালয় পুলিশের তৎপরতার কারণে তারা যে দুই তিন কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল সেটি নিতে তারা ব্যর্থ হয় এবং আমরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করি।

অপহরণের এ ঘটনায় সামিদুলের মাধ্যমে দেখেছি তার মতো বহু চালক এসব অপহরণ চক্র ও সন্ত্রাসীদের কাছে তথ্য দিয়ে থাকে। গাড়ি চালকরা পরিবারের সদস্যদের বিষয় বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে। এসব তথ্যের কারণেই অনেক ঘটনা ঘটছে। সব তো আর আমাদের কাছে অভিযোগ আসে না। অনেকে টাকা-পয়সা দিয়ে মীমাংসা করে কিন্তু হিমেলের মা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করায় এটা সম্ভব হয়েছে বলেও যোগ করেন হারুন।