ঢাকা মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১

আড়াই হাজার আফ্রিকানের অবৈধ কারবার


৩০ জানুয়ারী ২০২৪ ১০:৪৪

সংগৃহিত

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় আড়াইহাজারের বেশি বিদেশি অপরাধী বাস করছে। এসব বিদেশিরা মাদক চোরাচালান, স্বর্ন চোরাচালান, এটিএম কার্ড জালিয়াতি, জাল ডলার, লটারি ও গিফট প্রতারনার সঙ্গে জড়িত। অনেকে আবার এসব অপরাধে গ্রেফতারের পর জামিনে বের হয়ে দিনের পর দিন আদালতেও হাজিরাও দেয়না। আবার চুপিসারে দেশত্যাগ করেও চলে যায়। এদের বেশিরভাগই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক।

এসব অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নজরদারীও আনা হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কোকেনের চালান নিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা গ্রেফতার হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এ ব্যাপারে প্রস্তাবনা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী  বলেন, বিদেশি অপরাধীদের ব্যাপারে তাদের আইনের আওতায় আনতে আমরা একটি প্রস্তাবনা তৈরী করছি এটি দেয়া হবে মন্ত্রণালয়ে। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন যে এরা অন অ্যরাইভাল ভিসা নিয়ে গার্মেন্টস অথবা খেলাধুলার নামে এসে মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, প্রায় আড়াই হাজারের মত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছে যারা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা মনে করছি। এদের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকে আর কিছু থাকে চট্রগ্রামে। শিগগিরি এদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করছি আমরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারি বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আফ্রিকার মালাউই দেশের এত তরুণীর কাছ থেকে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম হেরোইন জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে এই কোকেন চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাসহ আরো ৪ জন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। তারা এদেশে অবৈধভাবে বসবাস করে বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে কোকেন পাচার করে আসছিল। গ্রেফতারকৃত নাইজেরিয়ার নাগরিক ডানকি মূলত আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারীরা অন্যতম সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে থেকে নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে আসছিল।

শুধু এই চক্রই নয় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে নাইজেরিয়া, সিয়েরেলিওন, তাঞ্জনিয়া, মালাউই, আইভেরিকোস্ট, ক্যামেরুনের নাগরিকরা দেশে গার্মেন্টস ও ফুটবল খেলার জন্য এ দেশে আসে। কিন্তু এর আড়ালে তারা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে তারা জাল ডলার ও গিফট পাঠানোর নামেই বেশি প্রতারনা করে থাকে। এর পাশাপাশি মাদক ও এটিএম কার্ড জালিয়াতির সঙ্গেও জড়িত।
জানা যায়, মোবাইল অথবা ফেসবুকে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে বিদেশ থেকে গিফট পওায়ার কথা বলা হয়। পরবর্তীতে সেই গিফট উঠাতে টাকা লাগবে বলে জানানোর পর কৌশলে টাকা নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। একই কায়দায় জাল ডলারও ছড়িয়ে দেয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় নানা অপরাধে এসব নাগরিকরা গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের তাদের সম্পর্কে নানা তথ্যও জানা যায়। আমরা সেটি নিয়ে কাজও করি। এরা গ্রেফতারের পর জামিনে বের হলে আর আদালতে যান না। এরা মূলত রাজধানীর অভিযাত এলাকায় গুলশান, বারিধারা, বনানী, বসুন্ধারা, উত্তরাতেই এদের অবস্থান।

সূত্র জানায়, অতিসম্প্রতি প্রতারণার দায়ে গ্রেফতার করা হয় স্টিফেন সোনিয়া। নামের এক নাইজেরীয় তরুনীকে। সে ফেসবুকে ভুক্তভোগীকে ম্যাসেজ দেয় সে ইয়ামেনে থাকেন। কাজ করেন সেনাবাহিনীতে। পিতা-মাতাসহ পরিবারের সবাই যুদ্ধে নিহত। পিতার রেখে যাওয়া টাকা কোন মুসলিম দেশে বিনিয়োগ করে ভবিষ্যতে সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করতে চান। এমনই এক লোভনীয় অফার দিলে ভুক্তভোগীও লোভে পড়ে। সেই লোভনীয় অফারে পড়ে অনেকেই বন্ধুত্ব তৈরীও করেন। এক পর্যায়ে ছোটখাট গিফটও পাঠান। সেই গিফট পেয়ে আস্থাও বাড়ে। এক পর্যায়ে সোনিয়া তার সেই কাঙ্খিত বন্ধুর নিকট টাকাসহ অন্যান্য গিফট পাঠানো হয়েছে বলে জানান। পরবর্তীতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম কর্মকর্তা পরিচয়ে দিয়ে দিয়ে সেই গিফট নেয়ার কথা বলা হয়। তবে সেই গিফট পেতে হলে কাস্টম ক্লিয়ার করতে হলে ৮ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগবে। বিনিময়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের গিফট পাবেন বলে জানানো হয় সেই বন্ধুকে। এক পর্যায়ে সেই টাকা দিলে বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ। গ্রেফতারের পর জামিনও পায় ওই নারী। বর্তমানে তার আর কোন খোঁজই নাই।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান  বলেন, আফ্রিকার কিছু কিছু দেশের নাগরিকদের অপরাধাদের কোন বিন্যাস নেই। তারা মূলত এদেশে আসেই প্রতারনাসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করতে। এ দেশে বসে কোকেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কও চালায় তারা।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত এদের গ্রেফতার করি। সবচেয়ে বড় হলো এরা প্রতারণার টাকাতে ঢাকায় অভিযাত এলাকায় বসবাস করে। আবার আমাদের দেশের কতিপয় কিছু লোক এদের শেল্টারও দেয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই থেকে আড়াই হাজারের মত এরা আছে। আমরা এদের গ্রেফতারে বড় অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছি।