ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২

পোশাক রপ্তানির আড়ালে পাচার ৩০০ কোটি টাকা


৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৭

ছবি সংগৃহীত

১০ পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান ১২৩৪টি পণ্যচালানে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অভিনব কায়দায় রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশে পণ্যচালান হচ্ছে, কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসিত হচ্ছে না—এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিকে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শনাক্ত করা হয়।অ র্থ পাচারে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:- ১. প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, ২. ফ্যাশন ট্রেড, ৩. এম.ডি.এস ফ্যাশন, ৪. হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড,  ৫. থ্রি-স্টার ট্রেডিং, ৬. ফরচুন ফ্যাশন, ৭. অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার, ৮. পিক্সি নিটওয়্যারস লিমিটেড, ৯. স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড, ১০. ইডেন স্টাইল টেক্স

প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো টি-শার্ট, টপস, লেডিস ফেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি দেখিয়ে অর্থ পাচার করেছে। উল্লিখিত ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মূলত বিল অব এক্সপোর্টের ধরনের কোড ২০ ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি করে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করেছে। বিল অব এক্সপোর্টের ২৪ নং কলামে নমুনার কোড ২০ ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে কোনো অর্থ দেশে প্রত্যাবাসিত না হয়ে সমুদয় রপ্তানি মূল্য বাবদ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।  

জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি এবং বিধিবহির্ভূত কোড ব্যবহারের মাধ্যমে রপ্তানির একাধিক ঘটনা সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক উদঘাটন করেছে। বর্তমানে চলমান অনিয়মের তদন্তকালে ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে ১২৩৪টি পণ্যচালানে এমন জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। রপ্তানি সম্পন্ন ১২৩৪টি চালানের বিপরীতে পণ্যের পরিমাণ ১১২১ মেট্রিক টন, যার প্রত্যাবাসনযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার সম্ভাব্য পরিমাণ ৩,৫৩,৮৯,৯১৮ মার্কিন ডলার (৩০০ কোটি টাকা প্রায়)।

১০টি প্রতিষ্ঠানের বিল অব এক্সপোর্ট পর্যালোচনায় বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপিতে বর্ণিত তথ্যের মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি। বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সাউথ ইস্ট ব্যাংকের তথ্য মতে, উল্লিখিত ১০  প্রতিষ্ঠানের কোনোটির ওই ব্যাংকে লিয়েনকৃত নয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সাথে ওই ব্যাংক সম্পর্কিত নয় বিধায় সেই ব্যাংকের মাধ্যমে বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সেলস কন্ট্যাক্ট বা ইএক্সপি এর রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসিত হয়নি বা হওয়ার কোনো সুযোগও নেই।

কাস্টমস গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, অর্থ পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিল অব এক্সপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রপ্তানিকৃত পণ্য হলো টি-শার্ট। যেগুলোর প্রতি পিসের ওজন দেখানো হয়েছে ৫০০, ৮০০, ১০০০ গ্রাম বা তারও বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রতি কেজি নিট ফেব্রিক্স দিয়ে কমপক্ষে ৩-৬টি ফুল হাতা লং সাইজের টি-শার্ট প্রস্তুত করা হয়। এ অবস্থায় প্রতিটি টি-শার্টের গড় ওজন ন্যূনতম ২৫০ গ্রাম ধরে রপ্তানিকৃত টি-শার্টের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে। তাছাড়া কিছু-কিছু পণ্যচালানে রপ্তানি পণ্যের মূল্য খুবই কম ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সমসাময়িক রপ্তানি চালানের সমজাতীয় পণ্যের মূল্য বিবেচনায় নিয়ে সম্ভাব্য রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কাস্টমস গোয়েন্দা অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট বিল অব এক্সপোর্টে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করেছে। তাছাড়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো লেনদেনের ধরনে বিশেষ রপ্তানির জন্য প্রযোজ্য কোড ২০ ব্যবহার করেছে। অথচ, তাদের কারো ক্ষেত্রেই ওই কোড (সিএফসি কোড) প্রযোজ্য নয়।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মো. শামসুল আরেফিন খান বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পারস্পরিক সহযোগিতা ও যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সর্বমোট ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার (৩০০ কোটি টাকা প্রায়) পাচার করেছে। ইএক্সপির কার্যকারিতা না থাকায় বৈধ পন্থায় এই বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার সুযোগ নেই। ইতোপূর্বে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ৪টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একই পন্থায় ৩৭৯ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা উৎঘাটিত হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অনুসন্ধানসহ ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠানগুলোর বিআইএন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) এবং সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের এআইএন স্থগিত করা হয়েছে।