ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২

মামলা নেয়নি পুলিশ, হত্যার হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী


১৯ মে ২০২৩ ২১:৪৩

প্রতিকি

প্রভাবশালী এক নারী ও অপর দুই ব্যক্তিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিত ওই নারী রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার ধলপুর কলেস্টারগুলি কাজীরবাগ এলাকায় বাসিন্দা। নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই নারী গুলশান থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে পুলিশ তার অভিযোগ গ্রহণ না করেই থানা থেকে বের করে দিয়েছেন।

থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর তদন্ত শাহীনূর রহমান তার লিখিত অভিযোগের কপি, ও নির্যাতিত নারীর ছবি মোবাইল ধারণ করে আসামীদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই নারী। থানা পুলিশ প্রভাবিত হয়ে মামলা নেয়নি বলেও অভিযোগ তার।

নির্যাতিত নারীর লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার ৬০/২২/এ ধলপুর কাজীরবাগস্থ কলেস্টর গলিতে ভাড়া থাকতেন। বর্তমানে জীবন নাশের শঙ্কায় পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

তিনি লিখিত অভিযোগ বলেছেন, গত ৪ থেকে ৫ মাস আগে গুলশাস্থ বাড়ী-১০, দূতাভাস রোড, বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের বাসিন্দা বিদিশা সিদ্দিকা এর বাসায় ও তার ব্যাক্তিগত কাজের সহযোগিতা করার জন্য দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে তিনি যান। এজন্য তাকে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। এরপর নির্যাতিতা নারী বুঝতে পারেন,দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে রাত ৮ টা থেকে ৯টার পরে বিভিন্ন অজ্ঞাত পুরুষের সমাগম হয়। বিদিশা সিদ্দিকা, জনৈক অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন ব্যক্তি সহ বিভিন্ন লোকজন নিয়ে পার্টি করতেন । আর সেখানে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানো হতো। এ বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে ভয় পেয়ে যান। একপর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিদিশা সিদ্দিকা তাকে বলেন, তার সহযোগি বাসায় সন্ধা ৭ টার দিকে আসবে। এরপর ঠিক সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তি সেখানে আসেন। তখন বিদিশা সিদ্দিকার হুকুমে সেই ব্যক্তি বাসার রুমের সকল সিসি ক্যামেরার সংযোগ খুলে ফেলেন। পরে অজ্ঞাতনামা আরো ২জন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হন। এরপর তারা জোরপূর্বক ওই নারীর গায়ে হাত দেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করেন। এতে তার সহযোগি ব্যক্তি ওই নারীকে চর থাপ্পর মারতে থাকেন এবং টেনে হিচড়ে বেডরুমের দিকে নিয়ে যায়। পরে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রথমে মনজুর মোরশেদ নামের এক ব্যক্তি তাকে বিবস্ত্র করে জোর পূর্বক নির্যাতন করে। এরপর অজ্ঞাতনামা অপর দুই ব্যক্তিও তাকে জোর পূর্বক সংঘবদ্ধভাবে নির্যাতন করে। এসময় পাশে দাড়িয়ে থাকা বিদিশা সিদ্দিকা তাকে নির্যাতনের পুরো ভিডিওটি ধারন করেন। একপর্যায়ে তারা ওই নারীর মুখ বন্ধ করে রাখতে বলে এবং তারা যা বলবে তাই করতে বলা হয়।এরপর ওই নারীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়।

নির্যাতিত নারীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ভয় পেয়ে তার বাসায় চলে আসেন এবং তিনি বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেন। পরে গত ২৪ মার্চ আনুমানিক রাত ৯ টার দিকে মনজুর মোরশেদ ওই নারীর টিকাটুলিস্থ বাসায় গিয়ে তাকে ভয় দেখিয়ে দূতাবাস রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে নিয়ে যায়। এসময় বিদিশা সিদ্দিকা তার কাছে জানতে চান তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছে কেন। এসময় তার হাতের মোবাইল ফোন থেকে ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও দেখানো হয়। আর তাকে জানানো হয় যে, ভিডিওটি তার স্বামীকে দেখিয়ে ৩ সন্তান সহ সংসার ভেঙ্গে দিবে। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল করার হুমকি দেয়। এসময় পুনরায় মনজুর মোরশেদ ওই নারীকে আগের সেই রুমে নিয়ে তাকে পুনরায় জোর পূর্বক নির্যাতন করা হয়। আর বিদিশা সিদ্দিক অপর অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তিকে ফোন করে ডেকে আনেন। তারাও সেখানে উপস্থিত হয়ে পুনরায় ওই নারীকে নির্যাতন করেন। নির্যাতন শেষে তাকে তাদের কথামত চলতে হবে এবং হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। পরবর্তীতে তিনি বাসায় এসে তার স্বামী ও পরিবারকে ঘটনাটি জানান। আর বিদ্দিশা সিদ্দিকা ও মনজুর মোশেদের ভয়ে তিনি ও তার স্বামী সহ বাসা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাকে পাশবিক নির্যাতন ও নির্যাতনের ডিজিটাল ডিভাইসে ভিডিও ধারণ করে ভয়ভীতি দেখানের অভিযোগে গত ২৭ এপ্রিল গুলশান থানায় বিদিশা সিদ্দিকা সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যান। যা থানার ক্লোজ সার্কিক ক্যামেরায় প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও ডিউটি অফিসার তার অভিযোগটি গ্রহণ না করেই অভিযোগের কপি মোবাইলে ধারণ করেন। আর তার ছবি ধারণ করে বিদিশা সিদ্দিকার কাছে প্রেরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন। পরে সেখান থেকে ফোন আসার পর তাকে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে গুলশান থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শাহীনুর দাবি করে বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি।

তবে লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে আছে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি নিয়ে এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে বিদিশা এরশাদের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনও ধরেন নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।