হাসির জলসাঘরে অতিথি কারা

রাজধানীর অন্যতম অভিযাত এবং কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান বনানী। এলিট এলাকা হিসেবেও এর পরিচিত। আর এ কারণে এই এলাকার নিরাপত্তা অন্যান্য এলাকার চাইতে অনেকটাই বেশি। বিশেষ করে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি, এপিবিএন এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্বপালন করে থাকেন। অভিযাত এলাকাকে ঘিরে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। বিশেষ করে অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকান্ড ম্লান করে দিচ্ছে এ এলিট এলাকার বিশেষত্ব। বাসা বাড়ি কিংবা বাণিজ্যিক ভবন ভাড়া করে যেভাবে চলছে অনৈতিক কর্মকান্ড তা ভাবিয়ে তুলছে এ এলাকায় বসবাসকারীদের। চোখের সামনেই এ ধরনের ঘটনা চলতে থাকলেও তারা কিছু বলতেও পারছেনা। অনেকটা মানসম্মানের ভয়েও বছরের পর বছর ধরে তারা নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। এ ধরনের কর্মকান্ড নিরাপত্তার জন্যও হুমকি বলে মনে করছেন তারা।
গুলশান বনানীর স্পা’র আড়ালে বেসামাল অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ দ্বিতীয় পর্ব-
১৫ মার্চ সন্ধ্যা। রাজধানীর গুলশান ১ এর প্রাণকেন্দ্রে জব্বার টাওয়ারের অবস্থান। আর সেখানেই হট্টগল। টাওয়ারটিকে ঘিরে নানা অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সন্ধ্যায় এমন হট্টগোলে যে কেউ মনে করতে পারেন প্রতিষ্ঠানের কোন বিষয় নিয়ে ঝামেলা। একটু পরে আসে পুলিশের ভ্যান। লিফটের ১০ এ যায়। আধাঘণ্টা পর নারী পুরুষসহ ১৩ জনকে বের করে নিয়ে আসে। এখন আর কারও বুঝতে বাকি থাকেনা। আসলে বাণিজ্যিক এ ভবনটি চলে অসামাজিক কার্যকালাপ।
এমন স্থান আর এমন টাওয়ারের অসামাজিক কার্যকালাপের বিষয়টি নিয়ে উৎসুক জনতার ভ্রুকুঁচকে যায়। গুলশানের ১ এর জনাকীর্ণ একটি এলাকায় বাণিজ্যিক টাওয়ারের ফ্লোর ভাড়া নিয়ে কেমনে চলে এটি। আর কারাই বা এখানে আসা যাওয়া করে।
হ্যাঁ এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন গুলশানের স্পা আড়ালে অসামাজিক কার্যকালাপ করার অন্যতম মূল হোতা হাসি। শুধু জব্বার টাওয়ার নয়, হাসির অন্তত ৩ টি স্থানে স্পা আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কার্যকালাপ ও মদ জুয়ার বসছে। গুলশান ২ এর শাহাবুদ্দিন পার্ক সংলগ্ন ও ৫৫ নম্বর রোডে।
জব্বার টাওয়ারে অভিযানের কয়েকদিনের আবারও চালু হয়। অভিযান ও আটক করা লোক দেখানো কি না সেটিও নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
সেখানকার স্থানীয়রা বলেন, জব্বার টাওয়ার একটি বাণিজ্যিক টাওয়ার। বিভিন্ন অফিস এমনকি হলরুমও রয়েছে সেখানে। বিয়ে, জন্মদিনসহ নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। কিন্তু এ ব্যবসার কারণে তারা হরহামেশাই বিব্রত অবস্থায় পড়েন। কিন্তু এর প্রতিবাদ করতে গেলেই সমস্যা হবে। হাসি তার লোকজন দিয়ে হুমকি দেন। এ কারণে ভয়ে কেউ কথাও বলেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলশান ২ এ নুরুল ইসলামের মতই প্রভাবশালী এই হাসি। তার তিনটি সেন্টারেই স্পা আড়ালে চলে অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকালাপ পাশাপাশি মদ ও জুয়ার আসর। গুলশান ও এর বাইরে থেকে তার খদ্দেরদের আসা যাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে তিনি গুলশানের স্পা ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থান দখল করে আছেন। গুলশানের মত স্পর্শকাতর এলাকায় তার এ অসামাজিক কার্যকালাপের ব্যবসায় অনেকে ক্ষমতা বা পেশিশক্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। কার ইন্ধনে বা কার শেল্টারে গুলশানে তার নিষিদ্ধ বাণিজ্য সেটি নিয়েও রয়েছে নানা কৌতুহল।
সূত্র জানায়, হাসি হচ্ছে গুলশানের অন্যতম স্পা সম্রাট। দীর্ঘদিন তার এ ব্যবসায় এলাকার প্রভাবশালীদের সঙ্গে রয়েছে তার বিশেষ সখ্যতা। শুধুমাত্র নারীদিয়ে কব্জায় রেখে বছরের পর বছরের দাপটের সঙ্গে নিষিদ্ধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। স্পার আড়ালে একদিকে যেমন সে দেদারসে দেহ ব্যবসা চালায় অন্যদিকে তার স্পা সেন্টারগুলোতে বসে মদ জুয়ার রমরমা আসর।
অভিযোগ রয়েছে, তার স্পা সেন্টারকে ঘিরে এক শ্রেণীর লোকদের টার্গেট করে সে। গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করে পরবর্তীতে ওই লোককে ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী আইনেরও আশ্রয় নিতে পারেনা।
শুধুমাত্র এ ব্যবসা করেই হাসির জীবন পাল্টে গেছে। গাড়ি বাড়ি সবই এখন হাসির আয়ত্বে। চলাফেরাও সমাজের ওই স্তরেই। তার জলসাঘরে এমন ব্যক্তিরাই আসা যাওয়া করে যাদের কারণে তার গায়ে ফুলের টোকাও পড়েনা। এ কারণে নিষিদ্ধ ব্যবসায় কোটি টাকা আয় তার।
লোকজন বলছেন, গুলশানের নিরাপত্তা নিশ্চেত্তে প্রধান বাধাই স্পা’র আড়ালে এ ধরনের অনৈতিক বাণিজ্য। স্পাকে ঘিরে সম্প্রতি তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। গুলশানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ ধরনের অনৈতিক, অসামাজিক ও নিষিদ্ধ ব্যবসা বন্ধ চান স্থানীয় বাসিন্দারা।
পরের প্রতিবেদন--ধরাছোঁয়ার বাইরে সুলতানাও