ঢাকা শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

হাসপাতালে ভর্তি সিনিয়র এএসপিকে পিটিয়ে হত্যা


১০ নভেম্বর ২০২০ ০৬:৫৫

সংগৃহিত

কর্মস্থল বরিশাল থেকে চিকিৎসা করাতে ঢাকায় এনে হাসপাতালে ভর্তি প্রক্রিয়া চলার মধ্যে জীবন হারিয়েছেন পুলিশের সিনিয়র এএসপি মোহাম্মদ আনিসুল করিম। সোমবার দুপুরে রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তির জন্য আনা হলে হাসপাতালটির কর্মীরা আনিসুলকে দোতলায় নিয়ে যান। এর মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে নিচে থাকা আনিসুলের বাবা ও ভাইকে তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে জানান তারা। দোতলায় গিয়ে তারা আনিসুলকে মৃত অবস্থায় পান।

গাজীপুরের জয়দেবপুরের ছেলে আনিসুল ৩১তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে দ্বিতীয় হয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। নেত্রকোণা, ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‌্যাব, পুলিশ হেড কোয়ার্টার হয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন আনিসুল।

পরিবারের অভিযোগ, বরিশালে দায়িত্বে থাকার সময় আনিসুলের মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। এর জন্য বরিশালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েও সমস্যার উন্নতি না হওয়ায় তাকে সোমবার ঢাকায় আনা হয়। প্রথমে তাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তির জন্য নেয়া হয়। বেলা ১২টার দিকে হাসপাতালটিতে তাকে ভর্তির প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই হাসপাতালের লোকজন তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করেন।

হাসপাতালটির দ্বিতীয় তলার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, নিচ তলা থেকে দোতলায় নিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালটির অন্তত সাত-আটজনকে আনিসুলের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করছেন। এক পর্যায়ে তিনি বমি করতে শুরু করেন। এরপর তার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

ভর্তি করার পর একজন রোগীকে এভাবে কেন কী কারণে মারধর করা হলো এবং চিকিৎসা নিতে এসে একজন রোগী কেন প্রাণ হারাবে সেই প্রশ্ন আনিসুলের পরিবারের পাশাপাশি সহকর্মীদের।

আনিসুলের মরদেহ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে জানাজা শেষে দাফন করার জন্য জয়দেবপুরের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন তার ভাই সবুজ। বিবাহিত আনিসুল এক সন্তানের জনক।

সবুজ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘পরিবারের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গা ছিল আমার ভাই। তাকে শেষ করে দিয়েছে এই হাসপাতাল নামধারী কসাইখানা। কেন আমার ভাইকে তারা এভাবে মেরে ফেলল তার কঠোর শাস্তি চাই। আমার ভাই যেহেতু পুলিশ কর্মকর্তা ছিল তাই পুলিশ এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে মাইন্ড এইড হাসপাতালের ওয়েবসাইটে দেয়া নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের রিসিপসনিস্ট পরিচয় দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী হাসপাতালে এ ধরনের একজন রোগীকে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ভর্তি প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই ওই রোগীর মৃত্যু হয় বলেও জানান তিনি। তবে ঘটনার বিস্তারিত জানাতে পারেননি।

আনিসুলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে শোক জানানো হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহা. শফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জায়েদুল ইসলাম আনিসুলের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

আনিসুলের মৃত্যুর ঘটনায় মাইন্ড এইড হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে ৩১তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। এই ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবিও করেছে এই অ্যাসোসিয়েশন।