ঢাকা শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

সাবধান, প্রতারনার জাল সুন্দরি মারফিয়া খানের


১১ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৩৪

ছবি-সংগৃহিত

ভরাট চেহারা, ব্রাউন কালারের চুল, উচ্চতাতেও বেশ। পোশাকেও পশ্চিমা ছোঁয়া। মধ্যবয়সী হলেও দূর সে ভাঁজ নেই শরীরে। হটাৎ করে দেখে যে কারোরই মনে হতে পারে বিদেশি। আর এটাকে পুঁজি করে দেশজুড়ে প্রতারনার ফাঁদ পেতেছেন মারিয়া খান নামের এক নারী। প্রতারনার এই ফাঁদ শুধু তার একার না রয়েছে সংঘবদ্ধ একদল সহযোগী। যারা তাকে বিদেশি বলে পরিচয় করিয়ে পরে সর্বনাশ করছে সাধারণ মানুষদের।

১৯৭৪ সালের ২২ জানুয়ারি জন্ম নেয়া মারফিয়া খানের বাবা মাকুসদ আলী খান। রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় একসময় তাকে খান নামেই চিনতো। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। অভিযাত বংশে জন্ম নেয়ার কারণে মারফিয়া খান কিশোরী বয়স থেকেই এক প্রকার পুরুষ শিকারি ছিলেন। আর শিকারি পুরুষদের সঙ্গে প্রতারনা করেই এক সময় চলে যান আমেরিকা। পরে পেয়ে যান নাগরিকত্বও। এভাবেই একবার আমেরিকা আরেকবার বাংলাদেশ আসা যাওয়া করতে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই আসা যাওয়ার মাঝখানেই মারফিয়া খান এক প্রতারনার জাল বিছাতে থাকেন। গড়ে তোলেন তার সংঘবদ্ধ একদল সহযোগী। স্বামী বানিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নিরিহ পুরুষদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতে থাকেন লক্ষ লক্ষ টাকা। তার শিকারের মধ্যে ব্যবসায়ীর সংখ্যাই বেশি। তার প্রতারনার শিকার হয়ে অনেকেই মামলাও করেছেন। ওই সকল মামলাগুলোতে জেল জরিমানাও হয়েছে তার। অনেক ব্যবসায়ী প্রতারনার শিকার হলেও আত্নসম্মানের ভয়ে মামলাও করেননি।

এদিকে পুরুষ শিকারের প্রতারনা ছাড়াও অতি সম্প্রতি মারফিয়া খান নতুন করে প্রতারনার জাল বিছিয়েছেন। মা মাটি ও মারফিয়া ফাউন্ডেশন নামে ভূয়া বেসরকারী সংস্থা (এনজিও’র) খোলেন। যার ঠিকানা দেয়া রয়েছে ২০১ ইন্দিরা রোড। এই এনজিও’র বিদেশি অর্থ সহায়তাকারী হিসেবে সংঘবদ্ধ চক্রের দ্বারা পরিচিত করিয়ে সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়া শুরু করেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে তার সহযোগীরা এনজিওর বিদেশি ডোনার পরিচয় করিয়ে দিয়ে ঋণ দেয়ার নাম করে এ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের রংপুর অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়েও নিয়েছেন। এছাড়াও খুলনা, বরিশাল এবং চট্রগ্রামেরও কিছু এলাকায় এই চক্র ঋণ দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়ারও চেষ্টা করছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ওই প্রতারক চক্র মারফিয়া খানকে ফাউন্ডেশনের বিদেশি ডোনার পরিচয় করে দিচ্ছেন। এরপর ঋণ দেয়ার কথা বলে ঋণের পরিমান অনুযায়ী ১০, ২০ এমনকি ৫০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে ১ টাকাও ঋণ দেননি। গ্রাহকরা ঋণের জন্য চাপ দেয়ায় ইতিমধ্যে রংপুর এলাকাই ত্যাগ করেছে ওই চক্রটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত মারিয়া খানের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতারনার ৮টি মামলার খোঁজ পাওয়া যায়। এগুলো হলো ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার প্রতারণা মামলা নং ১০৪৪২/১৬। জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ ট্রাইবুনাল দায়রা (ঢাকা) ১২৮/১৬, আদাবর থানায় মামলা নং১০, ২৪/১১/১৩ এ ৪২০/৪০৬/৫০৬ আরসি এবং জিআর ২৪০/১৩। ব্যাংকের সাথে প্রতারণা। প্রবাসী রুবেলে নামের এক ব্যক্তির সাথে প্রতারনা মামলা সিআর ৫৪৫/১৬. (চলমান), আইডিএলসি থেকে লোন নিয়ে প্রতারণা সিআর ৯৭৫/১১ এবং ১৩৮ ধারায় আদালত কর্তৃক জেল ও জরিমানা হয় তার বিরুদ্ধে, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেড ঢাকায় সিআর মামলায় তার বিরুদ্ধে ২ বছরের সাজা ও অর্থদন্ড দেয়া হয়। অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম এর সাথে প্রতারণায় জেল ও জরিমানা আছে। ফরিদপুর আদালতে পাট ব্যবসায়ীর সাথে প্রতারনায় জেল ও জরিমানা আছে এবং রাঙ্গুনিয়া থানা মামলায় জেল ও জরিমানা আছে।

দিন দিন তার এ প্রতারণা বেড়েই চলছে। অতিদ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে সে আরো অনেক টাকা হাতিয়ে নিবে। অতিদ্রুত এটা বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।

প্রতারনার শিকার শাহারিয়ার নামের এক ব্যক্তি বলেন, বিয়ে করে তাকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রায় ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। এক পর্যায়ে সে প্রতারিত হয়েছে বুঝতে পেরে টাকা পেলত চাইলে বিভিন্ন হুমকির কারণে তিনি আর কিছু বলেননি।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, তাকে দেখে প্রথমে তিনি বিদেশিই মনে করেছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশি ও আমেরিকার সিটিজেন প্রাপ্ত জানতে পারেন। এক পর্যায়ে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার পর মারফিয়া খান তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন এবং আমেরিকায় নিয়ে যাবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। এ জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকাও খরচ করেন । পরে তিনি বুঝতে পারেন প্রতারকের খপ্পড়ে পড়েছেন। পরে তিনি আর টাকা না দেননি এবং যোগাযোগও রাখেননি। আত্নসম্মানের ভয়ে তিনি কোথাও অভিযোগও দেননি।

এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে মারফিয়ার সেই মা মাটি মারফিয়া ফাউন্ডেশনে সরেজিমন কয়েকবার গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগীরা দ্রুত এই প্রতারক চক্রের প্রধান মারফিয়াসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।