আলু ভর্তার সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হাবিবকে জবাই করে মামুন

যশোরের অভয়নগরে রঙমিস্ত্রি হাবিব খান হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে আসামি আল-মামুন। শনিবার যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুদ্দিন হোসাইনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মামুন। আল-মামুন মাগুরা জেলার ডাঙ্গাসিঙ্গিয়া গ্রামের হাবিব মোল্যার ছেলে।
গতকাল শুক্রবার ঢাকার আশুলিয়া থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। নিহত রঙমিস্ত্রি হাবিব খান (৪২) ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ খানের ছেলে।
অভয়নগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, হাবিব হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন পর শুক্রবার প্রধান আসামি আল-মামুনকে ঢাকার আশুলিয়ায় তার ফুপুর বাড়ি থেকে আটক করা হয়। থানা হেফাজতে প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে আল-মামুন বলেছে, সে একাই একটি ছোরা দিয়ে রঙমিস্ত্রি হাবিবকে জবাই করে হত্যা করেছিল। পরে লাশ গুম করার জন্য ওই ভবনের নিচ তলায় পানির রিজার্ভ ট্যাংকে ফেলে দিয়েছিল।
পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দিতে আল-মামুন স্বীকার করেছে, প্রায় এক বছর আগে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর আমি খুলনায় চলে আসি। কাজের সন্ধানে সম্পর্ক হয় রঙমিস্ত্রি হাবিব খানের সঙ্গে। এরপর হাবিবের সহযোগী হিসেবে রঙের কাজ শুরু করি।
অভয়নগরে সরকার গ্রুপের চেয়ারম্যান আলমগীর সরকারের নবনির্মিত সাততলা ভবনের রঙের কাজ করার সময় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে হাবিবের সঙ্গে আমার বাগবিতণ্ডা হয়। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় আমি ও হাবিব ছাড়া কেউ থাকতো না। কাজ করা বাবাদ হাবিবের কাছে ৫ হাজার ২০০ টাকা পাওনা ছিল। গত ১৩ অক্টোবর রোববার দুপুরে সেই টাকা চাইলে হাবিব আমাকে মাত্র পাঁচশ টাকা দেন। সব টাকা চাইলে আমাকে বঁটি দিয়ে কোপাতে আসেন। তখনই আমি হাবিবকে খুন করার পরিকল্পনা করি।
মামুন আরও বলেন, পরদিন রোববার বাজার থেকে ১০ পিস ঘুমের ট্যাবলেট (রিভোট্রিল-০.৫) ক্রয় করি। সেই ট্যাবলেট রাতে আলু ভর্তার সঙ্গে মিশিয়ে হাবিবকে খাওয়াই। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় রাত আনুমানিক ২টার সময় লুকিয়ে রাখা চাকু দিয়ে ঘুমে অচেতন হাবিবকে আমি দুই দফায় জবাই করি। পরে নিচ তলার পানির রিজার্ভ ট্যাংকে হাতে ও পায়ে ইট বেঁধে ফেলে দিয়ে বিভিন্ন স্থানে রক্তের চিহ্ন মুছে ফেলি এবং চাকুটি দোতলার একটি কমোডে ফেলে ফ্লাস করি। রক্তমাখা জামাকাপড়গুলো কার্নিশে লুকিয়ে রেখে গোসল করে ভোর রাতে ভবনের পেছনের গেট দিয়ে পালিয়ে যাই। সকালে বাসে প্রথমে চুড়ামনকাঠি খালা বাড়ি এবং পরে নড়াইলের লোহাগড়ায় দাদা বাড়িতে একদিন থাকি। পরদিন ঢাকার আশুলিয়ায় ফুপুর বাড়ি চলে যাই।
হত্যাকাণ্ডের পাঁচদিন পর গত ১৯ অক্টোবর শনিবার এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে সরকার গ্রুপের চেয়ারম্যান ভবন মালিক আলমগীর সরকার অভয়নগর থানা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে ওই ভবনের নিচ তলায় পানির রিজার্ভ ট্যাংক থেকে রঙমিস্ত্রি হাবিব খানের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। পরদিন নিহতের ভাই বাদী হয়ে আল-মামুনকে আসামি করে অভয়নগর থানায় হত্যা মামলা করেন।
আল-মামুন আটকের বিষয় নিয়ে শনিবার দুপুরে ব্রিফ করেন সহকারী পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতেও মামুন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
নতুনসময়/আইকে