ঢাকা মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩২


ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজন শক্তিশালী কৃষক সংগঠন


২৯ মে ২০১৯ ০২:০৪

ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজন শক্তিশালী কৃষক সংগঠন বলে মন্তব্য করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ।

মঙ্গলবার (২৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে একশন এইড-এর সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ধানসহ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে এ কথা বলেন।

প্রতি মন ধান যদি ৩০০ টাকা লোকসান হয় তাহলে মোট ক্ষতি দাড়াবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। যদি ৪০০ টাকা ক্ষতি হয় তাহলে ২০ হাজার কোটি টাকা। গড় হিসেব নিলে কৃষকের ক্ষতি হবে প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ক্ষতি নিরসনে সরকারকে অবিলম্বে ৫০ লাখ টন ধান ক্রয় ও মজুদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। আসন্ন বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকি ২৫ হাজার কোটি টাকা।

খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোতেও সরকার খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভর্তুকি দিয়ে থাকে। আমাদের সরকারও এক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে থাকে, কিন্তু এর সুফল আমাদের কৃষকরা সেভাবে পান না মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে। এর একটা বড় কারণ কৃষকরা এদেশে অসংগঠিত।

আনোয়ার ফারুক বলেন, আমাদের কৃষিপণ্য পরিবহন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণেই আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে দাবি করে থাকে। কৃষিক্ষেত্রে যাই ঘটুক, আমাদের প্রেক্ষাপটে ধান চাষ অব্যাহত থাকবেই। বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিপরীতে সরকারের ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘ সূত্রিতা কৃষককে সংকটে ফেলে দিয়েছে। এ মুহূর্তে কৃষককে তিন/চার মাসের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের স্থানভেদে বিকল্প কৃষি উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

ড. মো: আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা অনেক সুপারিশ করে থাকি, কিন্তু কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে তা গুরুত্বপূর্ণ। ধান ও চালের বাজারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, বিশেষত ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যায়। কৃষকদের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরের অভাব রয়েছে দেশে। সাম্প্রতিক সংকট সমাধানে সরকারকে সংবেদনশীল মনে হয়নি। সরকার মাঠ থেকে দ্রুত প্রকৃত তথ্য নেয়ার চেষ্টা করতে পারত। সরকারের সামর্থ্য না থাকলে গৃহস্থের ঘরেই ধান মজুত রাখার উদ্যোগ নিতে পারত
সরকার।

ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মূল্য কমিশনের বেঁধে দেয়া সুনির্দিষ্ট মূল্যে সরকারিভাবে অনেক পরিমাণে ধান ক্রয় করে থাকে। আমাদের দেশেও এ কমিশন গঠন করে সুফল পেতে পারি। ধান আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো-বাড়ানোর তাৎক্ষণিক সুফল কৃষকরা পায় না। এক্ষেত্রে গবেষণা ও মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে, যার প্রেক্ষিতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কৃষির যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি কৃষকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হলে স্থায়ী মূল্য কমিশন গঠন করা দরকার। আরো দরকার শক্তিশালী কৃষক সংগঠন।

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সাহানোয়ার সাঈদ শাহীন দেশের বর্তমান কৃষিখাতের চিত্র তুলে ধরে বলেন, দেশে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। কৃষককে বাজারের সাথে সম্পৃক্ত করতে না পারা আমাদের একটি
বড় ব্যর্থতা। এক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। উৎপাদিত ধানের মাত্র ছয় শতাংশ মজুদের ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ও উপকরণ ব্যবহারে অদক্ষতা ও প্রতারণার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। কৃষিখাতে ভর্তুকি ব্যবহারে রয়েছে ভারসাম্যহীনতা।

তিনি সুপারিশ করেন, সরকারি শস্য
মজুদের পরিমাণ আগামী দুই বছরের মধ্যে ৬০ লাখ টনে উন্নীত করার পাশাপাশি কমিউনিটি ভিত্তিক শস্যভার গড়ে তুলতে হবে। কৃষিবান্ধব যৌক্তিক আমদানি নীতি গ্রহণ করতে হবে। কৃষিনীতির যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার। সর্বোপরি সরকার যদি তার নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত কৃষি বিষয়ক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যেগী হয় তাহলেই এক্ষেত্রে অনেকটা অগ্রগতি সাধিত হবে।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ।