ডুমুরিয়ার তেলিগাতি নদীর পানি বৃদ্ধিতে আতঙ্ক

খুলনার ডুমুরয়িা উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তেলিগাতি নদীর পাড়ের বাগআচঁড়া ও বাদুরগাছা গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ বাঁধ ভাঙ্গার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। সোমবার দুপুরের অস্বাভাবিক জোয়ারের গোনের পানিতে নদীর পাড়ের গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। তেলিগাতি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণরে জন্য এক কালে দেয়া বিশাল আকৃতির বাঁধের এখন মাত্র ২/৩ ফুট বেঁচে আছে। বাকি সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, প্রতবিছর শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। দুর্বল হয়ে যাওয়া গ্রাম রক্ষা বেঁড়ি বাধ কোন কোন স্থানে ভেঙ্গে যায়। আবার কোন কোন স্থানে বাঁধের উপর দিয়ে জোয়ারের পানি উপচে পড়ে গ্রামে প্রবেশ করে। ডুমুরয়িা উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের বাগআঁচড়া ও বাদুরগাছা গ্রামের জন বসতি প্রায় ৫ হাজার মানুষ। এই গ্রামের দুটি বিলে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানে পাক ধরেছে । বিলে রয়েছে ছোট বড় শ’ শ’ মৎস্য ঘের। এছাড়া উপজেলার খর্ণিয়া বাজার, ডুমুরিয়া বাজার, কদমতলা বাজার, শিবপুর গ্রামসহ বেশ কিছু অঞ্চলে চলতি পূর্নিমা গোনে অস্বাভাবিক ভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে।
বাগআঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা সুকান্ত সরদার বলেন, প্রতিবছর আমাদের গ্রাম রক্ষা বাঁধ একটু একটু করে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন মাত্র এক থেকে দেড় ফুট বেঁচে আছে।
কিন্ত তার উপর দিয়েই জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে বাঁধের অধিকাংশ জায়গা দিয়ে এমন কি বাঁধের তলদেশ দিয়েও ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করে বসতবাড়ির আঙ্গিনা তলিয়ে যাচ্ছে। সোমবার দুপুরে পূর্ণ জোয়ারের সময় বাঁধ রক্ষা কাজে নিয়োজিত এলাকার কিরোণ সরদার,বিকাশ মন্ডল,প্রদীপ সরদার ও গৃহবধু কবিতা রাণী জানান, গত রোববার রাত থেকে পূর্ণিমার গোন শুরু হলে বাঁধ ভাঙ্গতে শুরু করে। তার পর থেকে জোয়ার শুরু হলে বাঁধের পাশে তারা যারা বসবাসকারী তাদের নির্ঘুম রাত কাঁটছে। রাত জেগে বাঁধের কোথায় কোন ফাটল দিয়ে পানি ঢুকছে সাথে সাথে তা আটকানোর চেষ্টা করা করছেন তারা। তারা আরো জানান ৭/৮ বছর যাবৎ জোয়ারের গোনে তারা বাঁধ নিয়ে খুব টেনশনে রয়েছেন। নদীর তলদেশ ৪/৫ ফুট ভরাট হয়ে উচু হয়ে যাওয়ায় এবং গ্রাম রক্ষা বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় জোয়ারের গোনে এমন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এলাকার ইউপি সদস্য দেবব্রত সরদার বলেন, ভেঙ্গে যাওযা বাঁধ মেরামতের কাজ করছে স্থানীয় ভূক্তভোগী এলাকাবাসী। গত অর্থ বছরে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্ধে বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা সংস্কার করা গেলেও বাদুরগাছা এলাকার দেড় কিলোমিটার এলাকা বরাদ্ধের অভাবে সংস্কার সম্ভব হয়নি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয় সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা একান্ত দরকার।
শোভনা ইউনয়িনরে সাবকে চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল গণি বলেন প্রতিবছর ফালগুন- চৈত্র -বৈশাখ মাসের অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার গোনে জোয়ারের পানি বাড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পায়। এবারও সোমবার ও মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারে বাগআঁচড়া বাদুরগাছা এলাকার তেলিগাতি নদীর পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। স্থানীয় এলাকাবাসী নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে আপদ কালীন পানি আটকাতে পারলেও চরম আতঙ্কে রয়েছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডইি) মো: মজিানুর রহমান জানান, চলতি পূর্ণিমার গোনে নদ-নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে দুই ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যে কারণে কোন কোন স্থানে বাঁধের উপর দিয়ে জোয়ারের পানি উপচে পড়ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাঁধ মেরামত করে উচ্চতা বৃদ্ধি করা হবে বলে তিনি জানান।