পরিচালকের কক্ষ ঘেরাও করল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসকরা

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকরা ‘নিরাপদ আবাসন’ নিশ্চিতের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। হোটেলে ‘কোয়ারেন্টিন সুবিধা’ বাতিল করার পর এই দাবিতে আজ শনিবার তারা এই আল্টিমেটাম দেন। এসময় হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, উপ-পরিচালক ডা. মামুন মোর্শেদ ও মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও কোভিড ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. শাহাদাৎ হোসেন রিপনের কক্ষ ঘেরাও করেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া জানান, কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকদের একটি আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী সরকার চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিন সুবিধা বাতিল করেছে। তাদের আবাসনের ব্যবস্থা নিজেদের করে নিতে বলা হয়েছে।
ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘আগে যেমন আবাসনের সুযোগ ছিল। এখন নুতন পরিপত্রে এ ধরনের সুযোগ নেই। আমরা তাদের আজকে থেকে হোটেল ছেড়ে দিতে বলেছি। এজন্য তারা অসন্তোষ জানিয়েছেন। বিষয়টি আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানিয়েছি। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের কোভিড ইউনিটে শতাধিক চিকিৎসাকর্মী পালাক্রমে কাজ করছেন বলে জানান উত্তম বড়ুয়া।
চিকিৎসকরা বলেন, ‘হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার কক্ষ ঘেরাও করা হলে তিনি আমাদের সামনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলমকে ফোন করেন, কিন্তু তিনি কোনো সমাধান দিতে পারেননি।’
একাধিক চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের হোটেল নেই, কোনো আবাসনের ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ করতে পারেনি। আমরা তো আমাদের পরিবারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের আজ ডিউটি শেষ করে বাসায় যেতে হবে। একাধিক চিকিৎসকের পরিবারের একাধিক সদস্য আমাদের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন, মারাও গেছেন তিন চিকিৎসকের বাবা ও শ্বশুর। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কোনো সমাধান আমরা পাইনি। আমরা কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। এর ভেতরে কোয়ারেন্টিনের কোনো সমাধান না হলে, আমরা করোনা ইউনিটে আর ডিউটি করবো না। তবে হাসপাতালের নন-করোনা ইউনিটে ডিউটি করব।’
প্রসঙ্গত, চিকিৎসা কর্মীদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত ১২ এপ্রিল রাজধানীর ছয়টি সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য ১৯টি হোটেল নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু গত ২৯ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয়, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নির্ধারিত আবাসিক হোটেলের বিল আর পরিশোধ করা হবে না। চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ হোটেলের সুবিধাও বাতিল করা হয়। তবে ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকরা দৈনিক দুই হাজার টাকা, নার্সরা ১ হাজার ২০০ টাকা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা ৮০০ টাকা করে ভাতা পাবেন বলে জানানো হয় ওই পরিপত্রে।