ঢাকা রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


সেই বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এবার সরকারি গৃহ নির্মাণের নাম করে দিনমজুরের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ


২৩ জুলাই ২০২০ ১৯:৩২

ফাইল ছবি

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ (দক্ষিণ) ইউনিয়নের বিতর্কিত সেই আজির উদ্দিন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এবার সরকারি গৃহ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী। বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আল-ইমরান বরাবর লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পূর্ব দক্ষিণভাগ (টিলাবাড়ি) এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মৃত রনই উল্লাহর ছেলে কাবুল আহমদ। উপজেলা প্রকল্প পরিদর্শন কর্মকর্তা (পিআইও) উবায়েদ উল্লাহ'র নাম ভাঙ্গিয়ে ঘুষ হিসাবে এই টাকা আত্মসাত করেন আজির চেয়ারম্যান।

ভুক্তভোগী কাবুল আহমদ তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন- "আমি একজন হতদরিদ্র, দিনমজুর মানুষ। বিগত প্রায় ৬ মাস আগে আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন আমাকে লোক মারফত তার অফিসে ডেকে পাঠান। আমি তার কাছে উপস্থিত হওয়ার পর আমাকে চেয়ারম্যান সাহেব বলেন, তোমাকে সরকারি একটা ঘর দিতে চাই। তবে এই ঘর পাওয়ার জন্য পিআইও সাহেবকে বিশ (২০) হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে। চেয়ারম্যান সাহেবকে বললাম, আমি খুবই গরীব মানুষ এত টাকা কোথায় পাবো? তখন তিনি বলেন, পিআইও কে ঘুষ না দিলে ঘর পাওয়া যাবে না। এই কথা শুনে আমি বহু কষ্টে পাঁচ (৫) হাজার টাকা যোগাড় করে দেই। এর ২/৩ দিন পর চেয়ারম্যান সাহেব আবার চাপ দিতে থাকেন টাকার জন্য। আমি আমার স্ত্রীকে দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কিস্তি তুলে আরো পাঁচ (৫) হাজার টাকা আজির উদ্দিন চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেই।
তারপর থেকে উনি আমাকে এড়িয়ে চলা শুরু করেন। বারবার তার সাথে দেখা করার চেষ্টা করলে তিনি দেখা করেন না, কথাও বলেন না। একপর্যায়ে তার সাথে সামনাসামনি কথা বললে তিনি আমাকে বলেন, 'এত অল্প টাকা ঘুষ দিয়ে লাখ টাকার ঘর আশা করো! আরো টাকা দাও। পিআইও সাহেবকে পুরো বিশ হাজার টাকা না দিলে তিনি ঘর দিবেন না।'
এই কথা শুনে আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে বলি, আমার ঘর লাগবে না, টাকাটা ফেরত দিয়ে দিন। তারপর থেকে তিনি শুরু করেন নানান তালবাহানা। আজ বিগত ছয় মাস থেকে তিনি আমাকে ঘুরাচ্ছেন টাকা ফেরত দেয়ার নাম করে। আর এই দিকে ঘরের আশায় কিস্তি তুলে টাকা দেয়ায় সেই কিস্তির সুদ টেনে যাচ্ছি প্রতি সাপ্তাহে। আমি দরিদ্র একজন দিনমজুরের সাথে দুর্নীতি পরায়ণ আজির উদ্দিন চেয়ারম্যানের এই অন্যায়ের সুবিচার চাই। আমি চেয়ারম্যানের কথা শুনে কিস্তির সুদ দিতে গিয়ে আজ ঘর-বাড়ি ছাড়া। এই ঘটনার স্বাক্ষী আমার এলাকার বহু মানুষ, যা সরেজমিনে অনুসন্ধানে আসলে হাতে-নাতে প্রমাণ পাবেন।"

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আল-ইমরান বলেন, আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দকেও বিষয়টি জানানো হবে।

উল্লেখ্য, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলার আসামী চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন ইতোমধ্যে সরকারি অর্থ আত্মসাত, ইউপি সদস্যদের অনাস্থা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযুক্ত হওয়া, বাজার এবং মহালের ভূয়া ইজারা দেয়া, বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ না করিয়ে অর্থ উত্তোলন, একই কাজ বারবার দেখিয়ে টাকা লুটপাট সহ নানা কারণে বিগত সাড়ে চার বছর থেকে চরম বিতর্কিত। সম্প্রতি করোনা মহামারীর সময়ে বড়লেখা উপজেলা চত্বরে মাস্ক সরিয়ে ধূমপান করে নতুন বিতর্কের জন্ম দেন এই চেয়ারম্যান। সেই ধূমপানের ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে সর্বত্র।