ঢাকা মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩২


বড়লেখার রতুলী বাজার ভূয়া ইজারা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ


২২ জুলাই ২০২০ ০০:১৬

ছবি প্রতিকী

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার আওতাধীন দক্ষিণভাগ (দক্ষিণ) ইউনিয়নের স্থানীয় রতুলী বাজারকে সরকারি বাজার উল্লেখ করে ভূয়া ইজারা দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। চলতি মাসের ১৫ জুলাই বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বড়লেখার ১০ নং দক্ষিণভাগ (দক্ষিণ) ইউনিয়নের একটি বেসরকারি বাজার রতুলী। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বিভিন্ন মাধ্যমে এটিকে সরকারি বাজার উল্লেখ করে ইজারা দেয়ার নামে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে নিলাম ডাকেন। প্রতিবার এই সাজানো নিলাম সরল বিশ্বাসে একাধিক ব্যবসায়ী অংশ নিলেও, চেয়ারম্যান নির্দিষ্ট এক ব্যক্তিকে ইজারা দিয়ে দেন মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে। সেই নিলামের জন্য দেয়া হয় না কোন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় 'নিলাম বিজ্ঞপ্তি', নিলামে অংশগ্রহণকারীদের জানানো হয় না সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন দরদাতার নাম পর্যন্ত। নিয়ম বহির্ভূত এমন সাজানো নিলামে বাজার ইজারা পাওয়া চেয়ারম্যানের মনোনিত সেই ব্যক্তি পরবর্তীতে সাধারণ ব্যবসায়ীদের চাপ দিতে থাকেন 'ট্যাক্স'র টাকা দেয়ার জন্য। সবসময় ইজারাদারকে 'ট্যাক্স'র নামে চাঁদা দিতে দিতে অতিষ্ঠ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে বাজারের ব্যবসায়ীরা জানতে পারেন 'রতুলী বাজার' কোন সরকারি বাজার নয়। এই বাজারে কোন ইজারাদার এভাবে চাপ দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারে না। তাই এর বিহিত চেয়ে তারা ইউএনও বরাবর এই লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন।

এব্যাপারে দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ইউনিয়ন চালাতে টাকা লাগে। আমি এত টাকা পাব কোথায়? তাই বাজার নিলাম করে টাকা নিয়ে আসি।
কিন্তু এটাতো ইউনিয়নের বা সরকারি বাজার না। আপনি কিভাবে নিলাম ডাকতে পারেন? কে আপনাকে এই অনুমতি দিলো? আর একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কেন বার বার ইজারা দেয়া হয়? এমন প্রশ্ন করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন। তারপর একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আল ইমরান লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আমরা তদন্ত স্বাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নিব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও শিক্ষা) মল্লিকা দে বলেন, রতুলী আমাদের তালিকাভুক্ত ইজারা দেয়ার মত কোন বাজার নয়। ইউনিয়ন পরিষদ বা চেয়ারম্যান কোনভাবেই এই বাজারের নিলাম ডাকতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এতগুলো বছর রাজস্ব আদায়ের নামে উনি বাজার ইজারা দিয়ে যে টাকা পেয়েছেন, তা সরকারের রাজস্ব কোষে জমাও দেননি। বেসরকারি বাজার সরকারের নাম ভাঙ্গিয়ে ইজারা দেয়া যেমন অপরাধ, তেমনি ইজারার নামে অর্জিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া আরেকটি অপরাধ। উনি সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ করেছেন।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান নতুন সময়ে বলেন, এই ইজারার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই আইন পরিপন্থী কাজ করেছেন। ইজারা দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ই অপরাধী। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এদের বিরুদ্ধে। একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কিভাবে একটা বেসরকারি বাজার ইজারার নামে টাকা নেন, এবং ইজারাদার কিভাবে ব্যবসায়ীদের নিকট চাঁদা দাবি করেন তা খতিয়ে দেখা হবে।