ঢাকা মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২


রূপগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গোলাকান্দাইলহাটে দখলদারদের থাবা !


৩০ জুন ২০২০ ০৫:৪৫

ছবি-নতুনসময়

এশিয়ান বাইপাস সড়ক ধরে গোলাকান্দাইল চত্ত্বর পেরিয়ে সামান্য দক্ষিণে গোলাকান্দাইল হাট। তবে গোলাকান্দাইল মেলা বললে সবাই চেনে। এ হাট ও মেলা শত বছরের বাঙালীয়ানার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এক সময় আশ পাশের কয়েক থানার লোকজন এ হাটে ও মেলায় আসতো। এ মেলার পাটা-পুতা মিষ্টির এখনো সুখ্যাতি রয়েছে।

প্রাচীন ঐতিহ্যের এ মেলার টুটি চেপে ধরেছে এক শ্রেণীর হতকুচ্ছিত দানবের দল। বিশাল প্রকান্ডের হাট ও মেলার জায়গা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। দখলদাররা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বাড়িঘর, স্থাপনা নির্মাণ করছে। কাউকে কোন ভ্রুকুটিনা করেই দখলদাররা দখলের মচ্ছবে মেতে উঠেছে। হাটটি বন্ধ হয়ে গেলে সরকার যেমন হারাবে রাজস্ব, তেমনি স্মৃতি অতলগহবরে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্য। স্থানীয় হাট ও মেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের দপ্তরে আবেদনও করেছেন। কিন্তু হবে-কি শেষ রক্ষা এ প্রশ্ন এখন জনমনে ?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের গোলাকান্দাইল হাটটি দশ পুরুষের আমলের। সঠিক করে কেউ হাটটির বয়স বলতে নাপারলেও অনেকে ধারণা দিয়েছেন। কেউ বলেছেন ৫শ’ বছর। কেউ বলেছেন হাজার বছর। কেউ বলেছেন দশ পুরুষ হয়ে গেছে। বয়স যাই হউক, এ হাটটি প্রাচীন। এক কালে এ হাটে পাশের আড়াইহাজার থানা, মাধবধী থানা, সোনারগাঁও থানা, কালিগঞ্জ থানা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও নরসিংদী থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসতো। হাটের পাশাপাশি গোলাকান্দাইলে পৌষমাসে বসতো পৌষ মেলা। মেলার বয়সও প্রায় শত বছর বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা জানান, গোলাকান্দাইল মেলার খুব পরিচিতি রয়েছে। এ মেলায় তখনকার সময় সব পাওয়া যেতো। এ মেলার পাটা-পুতা মিষ্টির সুখ্যাতি ছিলো। দখলবাজদের কারণে গত কয়েক বছর ধরে মেলাটিও বন্ধ রয়েছে বলে জানান তারা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেবলেন, ঐতিহ্যবাহী গোলাকান্দাইল হাট অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে গেলে। ফলে ক্রমেই হাটের জায়গা ছোট হয়ে আসছে। আগে শতশত দোকানদার আসতো। জায়গা সংকুলাননা থাকায় অনেক দোকানী আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এক সময় এ হাটের গমগম আওয়াজ কয়েক মাইল দূরে থেকেও শোনা যেতো। এখন হাটের বার তেমন হৈ-চৈ শোনা যায় না।
গোলাকান্দাইলের এ ঐর্তিয্যবাহি হাটটি কালের বির্বতনে ঢাকা-চট্রগ্রাম এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়ক, বেরীবাঁধ ও স্থানীয় দখলদাররা ইতো মধ্যে হাটের এক তৃতীয়াংশ জমি দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাটের জাগা দখল করে গড়ে তুলেছে ৫টি বাড়ি ও ১২টি দোকান। তাদের মধ্যে বাড়িকরে দখল নেয় যারা তারা হলেন জয়নাল হাজারী, টিটু মিয়া, মরিয়াম বেগম, মোঃ আউয়াল ও কৃষ্ণা দাস। আর দোকান করে দখলে নেয় করিম মোল্লা, কুদ্দুস মিয়া, ডাঃ কাশেম, জামাল, আবু তালেব, ফজল মিয়া, তাজুল ইসলাম, আমির হোসেন, রজব আলী, রাহাত মিয়া, ইদ্রিস আলী ও শিরিন আক্তার। দখলবাজরা সবাই বাড়ি ও দোকান তৈরি করে হাটের জাগা দখল করে নিয়েছে। হাটের এক তৃতীয়াংশ জাগা দখল হওয়ায় হাট অনেক সংকোচিত হয়ে পড়েছে। এভাবে হাটের জাগা দখল চলতে থাকলে দুই/এক বছরের মধ্যেই হাটের জাগা আর থাকবেনা বলেও মন্তব্য করেন সচেতন মহল।

গোলাকান্দাইল পূর্বপাড়া এলাকার ৯০বছর বয়সের চা-দোকান্দার মোঃ ফাইজ উদ্দিন বলে, আমার দাদার কাছে শুনছি কয়েকশ’বছর আগে এই হাট শুরু হয়েছে। গোলাকান্দাইল হাটের সাথে অতীতের অনেক ইতিহাস ঐতির্য্য জড়িত আছে। এক সময় এই হাটে অনেক দুর থেকে মানুষ হাট করতে আসতো। সে সময় হাজার হাজার মানুষ এ হাটে জড়ো হতো। সাপ্তাহিক হাট হওয়ায় এখানে আড়াইহাজার, সোনারগাঁও, কালিগঞ্জ, নরসিংদী ও মাধবদীর লোকজন হাট করত। হাট থেকে তারা পুরো সপ্তাহের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা বেচা করত, এসম য়হাটছিলসরগরম।

গোলাকান্দাইল হাটে প্রতি বছরে একবার পৌষ মাসে আনন্দ মেলা বসত। এই দখলবাজদের কারণে কয়েক বছর যাবত আনন্দ মেলাটা বন্ধ হয়ে গেছে।

উত্তর পাড়ার (৬৫) বছর বয়সের পরিমল ঘোষ বলেন, পৌষ মাসে মেলা আসলে এলাকায় আনন্দ বইতে শুরু করতো। সব ধর্মের মানুষ একসাথে আনন্দ উপভোগ করতো। এলাকার সব নতুন-পুরান নায়রীরা নায়রি করতো। এরা আসলে এলাকায় পৌষের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ত। পৌষ মাসের আগমণে গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের হিন্দু মুসলিম সবার বাড়িতে তাদের আতœীয় স্বজনদের ভীড় জমতে শুরু করতো। কতনা আনন্দের কথা মনে হয় সেই সময়ের। এখনআর সেই দিন নাই, আর আনন্দও নাই।
গোলাকান্দাইল এলাকার ৬০বছর বয়সের জীবন কৃষ্ণ দাস বলেন, আমার জীবনে যা দেখছি তাতেই বলতে পারি সে সময়ের আনন্দের কথা। যা বলে শেষ করা যায়না। কয়েক বছর আগে এ হাটে পৌষ মেলা একবারেই বন্ধ করে দিছে। এতে এলাকাবাসী মেলার সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হইছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত কয়েক বছর যাবত গোলাকান্দাইল হাট সরকারের নায়েব পরিচালনা করত। আর সেই সুযোগেই এই দখলবাজরা সহজে হাটের জাগার উপর ঘর-বাড়ি ও দোকানপাট তৈরি করে দখলে নিছে। হাট ইজারাদারের কাছেনা থাকায় হাটের কোন উন্নয়নও নেই, বরং হাটের জাগা দখলদাররা দখল করে নিছে। যার ফলে কমে গেছে হাটের পরিধি।
অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে গোলাকান্দাইল হাটের জমি দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবী করেন এলাকাবাসী। সচেতন মহল মনে করেন হাটটি দখলমুক্ত করলে সরকারের প্রতিবছর কোটি টাকার রাজস্ব বাড়বে আর এলাকাবাসী ফিরে পাবে তাদের হাজার বছরের হারিয়ে যাওয়া ঐতিয্যবাহি হাট।