ঢাকা বুধবার, ১৪ই মে ২০২৫, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২


দৌলতপুরে ৮ কেজি গাঁজা আটকের পর উধাও


২৬ জুন ২০২০ ২০:৫৮

ছবি সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ৮ কেজি গাঁজা আটকের পর উধাও করার অভিযোগ উঠেছে মথুরাপুর পুলিশ কাম্পের আইসি এস আই জাব্বার সরকারের বিরুদ্ধে।

গত ২৪ শে জুন বুধবার উপজেলার হোসেনাবাদ চার রাস্তার মোড় নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান,উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ চার রাস্তার মোড় নামক স্থানে একটি ব্যাটারি চালিত ভ্যান পৌঁছালে মোটরসাইকেল যোগে দুজন লোক পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভ্যান গাড়িটিকে মথুরাপুরের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে হোসেনাবাদ থেকে মথুরাপুর যেতে মাঠের মাঝে কালভাটের কাছে নবনির্মিত ভবনে কর্মরত রাজ মিস্তিরা জানান গত ২৪ শে জুন বুধবার সকাল অনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে সামনের কাঁচা রাস্তাটি দিয়ে একটি ভ্যান গাড়িতে ২ জন লোক সহ যায়, তার কিছু খন পরে একটি সাদা পুলিশের মোটরসাইকেলে একজন দাঁড়িয়ালা পুলিশ মাঠের ওই রাস্তার দিকে যায়। এই প্রতিবেদক এর কাছে থাকা তথ্য ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর দেওয়া সাক্ষাৎকারের বর্ণনা মতে মথুরাপুর পুলিশ ক্যাম্পের আই সি সাথে মিল খুজে পাই এই প্রতিবেদক। এই ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধারের ব্যাপারে মথুরাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জব্বার সরকার বারবারই অস্বীকার করে কিন্তু এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা আনুমানিক রাত নয়টার দিকে মহিষকুন্ডির ভোলাপাড়া লালু ও পালুর বাড়ির পাশের মাঠ থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় দুই কেজি গাঁজা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে পরিবেশন করেন, কথায় আছে মিথ্যা কখনো সত্যে পরিণত করা সম্ভব নয়, প্রতিবেদক রাত দশটার মথুরাপুর ফাঁড়িতে হঠাৎ করে উপস্থিত হয়ে দেখতে পায় ফাড়ির আইসি তড়িঘড়ি করে সাদা কাগজে দুজনের নাম লেখা জব্দ তালিকা ঠিক করছে।

উল্লেখ্য,গোপনে পাওয়া তথ্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা মত কাঁচা রাস্তাধরে সামনের দিকে আগাতে থাকে এই প্রতিবেদকসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক। কিছুদুর যাওয়ার পরে মাদ্রাসার সামনে কাঁচা রাস্তার যেতে ডান পাশে একটি বাঁশ বাগানের নিচে ভ্যান গাড়িটি নিয়ে যাওয়ার দাগ পাওয়া যায়। পরে সেখানে অনেক খানি জায়গাজুড়ে গাঁজার বিজ ও গাঁজার গুড়া দেখা যায় এবং পাশে ভ্যান গাড়িটির বডির ভাংগা অংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালানোর সময় গাঁজা বহনকারী ভ্যান গাড়িটির চালকের সন্ধান পাই স্থানীয় সাংবাদিকরা , নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে গাঁজা বহনকারী ওই ভ্যান চালক জানান, আমি গরীব মানুষ, ভ্যান গাড়িটি আমাকে একটি স্থানে পৌঁছে দিয়ে আসার কথা বলে আমি তার কথা মত ভ্যানটি নিয়ে হোসেনাবাদ এলাকার চার রাস্তার মোড়ে পৌঁছালে আমাকে ২ জন ব্যাক্তি থামতে বলেন আমি থামলে তারা আমার গাড়িটার নিচে তাকিয়ে বলে মালটা কার? আমি তখন কান্নাকাটি শুরু করি ,তখন তারা আমাকে বলেন চুপচাপ থাক তোকে ছেড়ে দেওয়া হবে । আর কান্নাকাটি করলে ছাড়তে পারবোনা। পরে তাদের কথা মত আমি আসতে থাকি হোসেনাবাদ থেকে মথুরাপুর আসার পথের মাঝে একটি নতুন বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে সেই বাড়িটার ডান পাশে একটি হেরিং রাস্তা সেই দিক দিয়ে নামিয়ে নিয়ে যায় পরে মাদ্রাসার সামনে ডান পাশে বাগানে নিয়ে যায়।

এমত সময় মথুরাপুর ক্যাম্প থেকে একটি সাদা কালার পুলিশের মোটরসাইকেল চড়ে একটি দাড়িয়ালা পুলিশ আসে তার গলায় একটি রুপার চেন আছে। সে এসে আমার ভ্যান গাড়িটির নিচে অতিরিক্ত তৈরি করা বডি ভেংগে সেখানে থাকা গাঁজা বের করে নেই, সেখানে গাঁজা ছিল আট কেজি। তিনি আরো জানান তখন ক্যাম্প থেকে আসা সেই অফিসারের কথা মত তারা গাঁজা ২ টি ব্যাগে করে মাঠের মাঝ দিয়ে নিয়ে চলে যায় আমাকে চুপচাপ চলে যেতে বলে আমি চলে আসি ।

এ বিষয়ে মথুরাপুর ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই জাব্বার সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।

কিন্তু পুলিশ লাইন থেকে তার নামে ইস্যু করা মোটরসাইকেল যোগে তাকে ঘটনাস্থলে আসতে অনেকেই দেখেছেন।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা অফিসার ইনচার্জ এস এম আরিফুর রহমান জানান,বিষয়টি আমি শুসেছি তদন্ত করে দেখা হবে।

এই ব্যাপারসহ পূর্বের বেশ কয়েকটি এমন অভিযোগ উঠেছে দৌলতপুর পুলিশের বিরুদ্ধে, মাদক পরিবহনের সময় পুলিশের হাতে বিভিন্ন স্থান থেকে আটকের খবর পাওয়া গেলে স্থানীয় সাংবাদিকরা দৌলতপুর পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এই উদ্ধারের ব্যাপারে কিছুই জানেনা বলে বারংবারই বলে থাকেন, একাধিকবার মাদক উদ্ধারের এমন ঘটনা ঘটলেও দৌলতপুর থানা পুলিশ বারবারই অস্বীকার করে আসছে, এমনটি হওয়ার পরেই বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে খুঁজে পাওয়া গেছে দৌলতপুর পুলিশের এমন গুরুতর অভিযোগের সত্যতা।

দৌলতপুর পুলিশের এমন আচরণের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের মানুষ বারবার অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি দৌলতপুরের সার্কেল এসপি, এ ব্যাপারে ভেড়ামারা দৌলতপুরের সার্কেল এসপির নিকট অভিযোগ করলেও কোন সমস্যার সমাধান না হয়নি, যারা এই ব্যাপার নিয়ে অভিযোগ করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে আসে গ্রেপ্তারের হুমকি বাধ্য হয়ে তারা সাংবাদিক সম্মেলন করে, তার পরেও টনক নড়েনি জেলা পুলিশের।

গতকাল মথুরাপুর ফাঁড়ির আইসির ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার সংক্রান্ত ব্যাপারে ভেড়ামারা দৌলতপুরের সার্কেল এসপিকে প্রশ্ন করলে তার রক্তচক্ষু ও চোখ রাঙানো বক্তব্যই পরিষ্কার ফুটে ওঠে দৌলতপুরের বর্তমান মাদক চোরাকারবারি ও পুলিশের সম্পর্কের নিখুঁত গাঁথুনি।

কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত তিনি একাধিকবার দৌলতপুরের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মাদকের প্রবেশের পথগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং মাদক চোরাকারবারির সাথে জড়িত বিভিন্ন গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে মাদকের সুফল কুফল নিয়ে আলোচনা করেছে এবং বিভিন্ন স্থানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সভা-সমাবেশ ও করেছেন, তিনি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণাও দিয়েছিলেন এবং তিনি জনসমুদ্রে পরিণত এক জনসভায় বলেছিলেন এ জেলা থেকে মাদক নিঃশেষ করতে না পারলে চুড়ি পরে এই জেলা থেকে চলে যাবো, পুলিশ সুপারের এমন ঘোষণার পরপরই শুরু হয় মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান, একেরপর এক অভিযানের ফলে কোণঠাসা হয়ে আত্মসমর্পণ করে অনেক মাদক ব্যবসায়ী।