রাজশাহীতে মেস ভাড়া নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশজুড়ে চলছে অঘোষিত লকডাউন। আর রাজশাহীতে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়া হয়।
এর আগে, মহামারী করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব রোধে চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষানগরী রাজশাহীর সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সকল শিক্ষার্থী মেস ছেড়ে নিজ বাড়িতে চলে যায়।
করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে মেস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মালিকরা মেসের বর্ডার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে বিকাশে ভাড়া পরিশোধের জন্য তাগিদ দেয়া শুরু করে। মেসের বর্ডাররদের মধ্যে অনেকেই নগরীতে টিউশনি বা অন্যান্য কাজ করে শহরে পড়াশোনা করত। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ ধরনের শিক্ষার্থী পড়েছেন বিপাকে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে রাজশাহী মহানগরীতে মেস ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় মেস মালিকের কাছে মেস ভাড়া মওকুফের দাবি জানান রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘রাজশাহীর মেস ভাড়া মওকুফের দাবি’ নামক একটি গ্রুপ খুলে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এই গ্রুপের কিছু কিছু শিক্ষার্থী করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পুরো ভাড়া মওকুফের দাবি জানালেও কিছু কিছু শিক্ষার্থী এই পরিস্থিতির মধ্যে মেস মালিকদের কথা মাথায় রেখে অর্ধেক কমানোর দাবি করছেন। যাতে মেস মালিক ও মেসের বর্ডার দুই পক্ষই কিছুটা উপকার পেতে পারে।
এছাড়া, দেশের ভয়াবহ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে তাদের বাবার পক্ষে সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।
গ্রুপে থাকা মাহমুদুল ইন্তাজ রনি নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, এপ্রিল মাসের ভাড়া দেয়া হয়নি, মেস মালিক বলেছে মে মাসের ভাড়া দিয়ে সিট বাতিল করতে এখন আমার কি করা উচিত?
সুজন হোসেন জীবন নামের এই গ্রুপের আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, আমরা যারা রাজশাহীতে মেসে থাকি তাদের এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ম্যাচ ভাড়া। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অনেক পরিবার আছে যারা দুই বেলা দু মুঠো খেতে পারছে না এক্ষেত্রে মেস ভাড়া কি করে দিবে?
অভিজিৎ রায় নামের আরেকজন লিখেন, আমার মেস মালিক কোন কথাই শুনছে না দুই মাসের ভাড়া একসাথে চাচ্ছে ব্যবহার সহ্য করা দায় হয়ে পড়েছে?
আসিফ হাসান নামে আরেকজন লেখেন, আমাদের মেস মালিক বলেছেন ১ থেকে ৪ তারিখের মধ্যে ভাড়া দিলে জরিমানা লাগবেনা। না হলে যত দিন পার হবে তত ১০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
বিপুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, আমরা যারা টিউশনি করিয়ে মাসের টাকা দেই তারা তাদের তো টিউশনি নেই তাহলে আমরা কি করে ভাড়া দিব?শুধু এই শিক্ষার্থীরাই নয় এই গ্রুপের প্রায় তিন থেকে চার হাজারের ওপরে সদস্য প্রত্যেকেই নিজের নিজের অবস্থান জানিয়ে ম্যাচ ভাড়া মওকুফ দাবি করছেন।
এদিকে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন আলী পদ্মাটাইমসকে জানিয়েছেন, রাজশাহীর ৮০% শিক্ষার্থী গ্রামের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। দেশের এই অচল অবস্থায় তাঁদের টিউশনি বন্ধ ও পরিবারের আয়ের উৎসও বন্ধ। এদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করতেছে। তাই মেস ভাড়া মুওকুফ করা জরুরী ও সময়ের দাবি বলে মনে করেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, মেস ভাড়া মওকুফের ব্যাপারে সরকারি এ ধরনের কোনো নির্দেশনা এখনো নেয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারো উপর কোন নির্দেশনা না সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তবে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ মেস মালিকের কাছে নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরে এর সমাধান করে নিতে পারে।