ঢাকা রবিবার, ১৮ই মে ২০২৫, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


অনশনকারীদের পেটের জোর কমলেও কমেনি মনের জোর!


৩ জানুয়ারী ২০২০ ০৩:৩৩

আমরণ অনশনের পঞ্চম দিন আজ। দানাপানি কিংবা কোন ধরনের আহার ছাড়াই চলছে দ্বিতীয় দফায় অনশন। চলমান অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। কিন্তু পেটের জোর কমলেও কমেনি মনের জোর। চলছে সমান তালে কর্মসূচি। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে গোটা অনশন এলাকাসমূহ। আজ বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) পঞ্চম দিনের মত- মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া প্রদান, পাটকলগুলো আধুনিকীকরণ, অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী, জুট গুডস ম্যান্ডেটরি অ্যাক্ট পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, বকেয়া পিএফ ও গ্র্যাচুইটির টাকা প্রদান, পাট মৌসুমে কাঁচা পাট ক্রয়ে অর্থ ছাড় প্রভৃতি ১১ দফা দাবিতে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন চলছে। খুলনা-যশোরসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল এলাকায়ই রাত-দিন পার করছেন অনশনরত শ্রমিকরা।

উল্লেখ্য এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, নরসিংদী ও রাজশাহীর মিল গেটে এ অনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন অসংখ্য শ্রমিক। এদিকে গতকাল বুধবার ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনটি অনশনস্থলেই কেটেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সকল পাটকল শ্রমিকের। বৃহস্পতিবার কর্মসূচিতে শ্রমিকদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও অংশ নিচ্ছেন। এরই মধ্যে রাজপথে অনশনে এসে গতকাল বিকেল পর্যন্ত শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনশনস্থলে অনেক শ্রমিককে স্যালাইন দেওয়া হয়। কর্মসূচি পঞ্চম দিন আজ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্বজনরা। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।

প্রথম দফার অনশন শেষে গত রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ফের আমরণ অনশন শুরু করেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। শ্রমিকরা জানায়, দ্বিতীয় দফায় গত রবিবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। অনশনের তৃতীয় দিনেও বিজেএমসি বা সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শ্রমিকদের আমরণ অনশনের কারণে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে প্রতিদিন উৎপাদনে এক কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলের প্রতিদিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮৬ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন। মিলগুলোর প্রতিদিনের উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯টি মিলে উৎপাদিত পণ্য মজুদ রয়েছে হেসিং ৭৭৪ মেট্রিকটন, সেকিং ২৪ হাজার ১৯৩ মেট্রিকটন, সিবিসি তিন হাজার ৮১৭ মেট্রিকটন এবং ইয়ার্ন ৯০ মেট্রিকটন। এদিকে, নরসিংদীসহ কয়েকটি জায়গায় অনশনে অংশ নিয়ে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকজন। সরেজমিনে দেখা যায়, তীব্র শীত উপেক্ষা করে গত রবিবার থেকে কাঁথা-বালিশ নিয়ে অনশনস্থলে অবস্থান করছেন জুটমিলের শ্রমিকরা। দিন-রাত মিলের সামনে চটের (বস্তা) ওপর বসে, শুয়ে ও ঘুমিয়ে দিন পার করছেন তাঁরা।

নরসিংদির ইউএমসি জুটমিলের সিবিএ সভাপতি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করার পরও শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মানতে কর্তৃপক্ষের কষ্ট হয়। অথচ কর্মকর্তারা লুটপাট করে জুটমিলগুলোকে লোকসানে ফেলছেন। এদিকে শ্রমিকদের দাবি নিয়ে গত ১৫, ২২ ও ২৬ ডিসেম্বর তিন দফা বৈঠক হলেও কোনো আশানুরুপ ফল আসেনি তাতে। সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় ওই দিন ২৯ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আবারও অনশন শুরু করেন শ্রমিক নেতারা। বিষয়টি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আবারো বৈঠকের কথা রয়েছে।

নতুনসময়/আইকে