ধানের মূল্য কম পাওয়ায় সবজি চাষে ঝুঁকেছে মোহনপুরের কৃষক

ধানের ভাল দর না পাওয়ায় চলতি মুওসুমে শীতকালীন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কৃষকদের মধ্যে শীতকালীন মৌসুমী সবজি চাষে ঝুঁকেছে চাষিরা। শীতের শুরু হতে বাজারে শীতকালীন শাকসবজির ভাল দামে বিক্রি করে অধিক টাকা উপার্জন করা সম্ভব বলে চারা তৈরি ও জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিরা। অন্যদিকে ধানের ভালো ফলন হলেও বাজারে দাম কম হওয়ায় চাষিরা নিরুপায় হয়ে চলতি বছরে কৃষকদের ক্ষতি পুঁসিয়ে নিতে এবং বেশি লাভের আশায় শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকেছে এবং সবজি খেতের পরিচর্যা নিয়ে সময় পার করছেন এ উপজেলার চাষিরা। তাইতো কৃষকরা রোপনকৃত বিভিন্ন সবজি ক্ষেতে পরিচর্যা, রোগ-বালাই দমন ও অধিক ফলনের আশায় হাড়ভাঙা কঠোর পরিশ্রম করছে দিনরাত।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে মোট সাড়ে ৫‘শ হেক্টর জমিতে শীত মওসুমী সবজি চাষ হচ্ছে। যেমন বেগুন, মুলা, টমেটো, শিম, বরবটি, শসা, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্ষীরা, পেঁপে,কলাসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করার লক্ষ্য নিয়ে কৃষকরা মাঠে নেমেছে। উপজেলার সবচেয়ে সবজি উৎপাদন হয় ঘাসিগ্রাম, পালশা, মহব্বতপুর, পিয়ারপুর, খানপুর, মৌগাছি, মাটিকাটা, নদনহাট, খয়রা, বিদিরপুর, বেড়াবাড়ি ও কালীগ্রাম এলাকায় ব্যাপকহারে শাকসবজি চাষ হয়। সাম্প্রতিক সময়ের সবজির বাজার দর বিশ্লেষণ করে চাষিরা সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ার জন্য সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছে। সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভাল মুনাফা পাওয়ার জন্য চাষিরা ব্যাপকহারে শীতকালীন সবজি চাষ করছে। চারা তৈরি থেকে শুরু করে শাকসবজি রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার চাষিরা। পুরুষদের পাশাপাশি ঘরের নারীরাও কাজ করছে সবজি ক্ষেতে।
ঘাসিগ্রাম এলাকার চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, তার জমিতে ধান চাষ করে পর পর লোকসান গুণতে হয়। পরে নিরুপায় হয়ে ধান চাষকৃত জমিগুলোতে বিভিন্ন সবজি চাষ করি এবং ভাল দামে বাজারে বিক্রি হয়। বর্তমানে রোপনকৃত সবজির মধ্যে রয়েছে মুলা, বেগুন, শিম, ফুলকপি, বাঁধা কপি, লালশাক, তিতা করলা, টমেটো, ঢেঁড়স, পালংশাক ও পুঁই শাক। তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক মাসের মধ্যেই ক্ষেত থেকে উঠবে শীতকালীন শাকসবজি। বেশি লাভ ও বাম্পার ফলন হবে এমনটাই প্রত্যাশা এই সবজি চাষির।
মৌগাছি এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম, পালশা গ্রামের কৃষক আক্কাস আলীসহ কয়েকজন চাষি বলেন, ধানের ভালো ফলন হলেও বাজারে মূল্য না পাওয়ায় লোকসান হচ্ছে। প্রতি বিঘা ধান চাষ করে বাজারে বিক্রি করে খরচ জোটছে না। তাই নিরুপায় হয়ে এবার শীতকালীন সবজি চাষে নেমেছি। তারা আরো বলেন, ইতিমধ্যে ক্ষেত হতে কিছু সবজি তুলে বাজারজাত করেছি এবং তাতে ভাল মুনাফাও পেয়েছি।
মোহনপুর বাজারের কাঁচা মালামাল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, বর্তমানে বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরাও ভাল লাভবান হচ্ছে। তিনি আরো জানান, কানো সবজি যদি মৌসুমের শুরুতে বাজারে তোলা যায়, তবে তার দাম বেশি পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সবজির বাম্পার ফলন হবে। এ অঞ্চলের মাটি অনেক উর্বর হওয়ায় সবজি উৎপাদন বেশি হয়। কৃষকরা যেনো আধুনিক পদ্ধতিতে আরো উন্নত ও গুণ গতমানের ফসল উৎপাদন করতে পারে সে লক্ষ্যে কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক সহযোগিতা এবং তদারকি করছে। মাঠ পর্যায়ে প্রতিটি এলাকায় উপ সহাকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন এবং কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।