রাজশাহীতে দূর্নীতির অভিযুক্ত কলেজ অধ্যক্ষের তথ্য দিতে গড়িমসি

রাজশাহী কোর্ট মহাদ্যিালয়ের অধ্যক্ষ এ, কে,এম কামরুজ্জামানের অসাদাচরন, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক দূর্নীতির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর থেকে তদন্ত হয়েছে। রোববার এ তদন্ত করেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক প্রলয় দাস।
জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবরের দিকে বিভিন্ন দপ্তরে অধ্যক্ষ এ, কে, এম কামরুজ্জামানের অসাদাচরনসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির বিদ্যাৎসাহী সদস্য ও সাবেক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। এছাড়াও তিনি ১৬ সেপ্টেম্বরও জেলা প্রশাসক বরাবরে এমন লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, কলেজের উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য গভর্নিং বডি কর্তৃক অনুমোদিত উন্নয়ন, নির্মান ও সংস্কার কমিটি রয়েছে। যারা কলেজের সকল কাজকর্ম সম্পাদন করেন। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ উক্ত কমিটিকে উপেক্ষা করে আর্থিক দূর্নীতির উদ্দেশ্যে নিজে এবং তার মনোনীত কয়েক জন শিক্ষক দিয়ে নামমাত্র এসব কাজ করছেন। অধ্যক্ষ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক হাসানুজ্জামান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক মসিউর রহমানকে দিয়ে জানুয়ারী ২০১৯ থেকে নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পাদন করেছেন যার ব্যয় প্রায় ৬ লাখ টাকা। উক্ত কাজের মাধ্যমে তিনি গভর্ণিং বডিকে অবজ্ঞা করেছেন।
১৯ জন খন্ডকালীন শিক্ষক ও কর্মচারী ছাড়াও অধ্যক্ষ নিজে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ছাড়াই জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের সম্মান শ্রেণির যে বিষয়সমূহ এখনও অধিভুক্ত হয়নি এরুপ কিছু শিক্ষদের কলেজ ফান্ড হতে মাসিক বেতন ভাতা প্রদান করেছেন। উল্লেখ যে বিষয় সমূহ এখন অধিভুক্ত হয়নি এরুপ ২৩ জন শিক্ষক আছেন। কিন্তু অধ্যক্ষ সবাইকে বেতন ভাতা না দিয়ে শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনা বিভাগের হাসানুজ্জামান, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের আব্দুল্লাহ আল মামুন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শতরুপ, জীববিজ্ঞান বিভাগের লায়লা আল ফারিয়া এই চার জন শিক্ষককে বেতন ভাতা প্রদান করেছেন। বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
যে সমস্ত খন্ডকালীন শিক্ষক, কম্পিউটার অপারেটর, পিওন, গভর্ণিং বডির অগোচরে অধ্যক্ষ স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ছাত্র বেতন ও সেশন চার্জের বাইরে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির প্রায় ৯৫০ জন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে ৪০০ টাকা করে বেশী আদায় করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ বিধিবর্হিভূত।
রাজশাহী কোর্ট মহাদ্যিালয়ের অধ্যক্ষ এ,কে,এম কামরুজ্জামান কলেজের স্টাফ রুম, অফিস রুম ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ বিভিন্ন স্থানে উদ্দেশ্য মূলকভাবে ভয়েস রেকর্ডিংসহ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন। তিনি এই ভয়েস রেকর্ডিংসহ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ৫০ মিটারের মধ্যে থেকে সকল কথাবার্তা মোবাইলের মাধ্যমে শোনেন।
এসময় শিক্ষকগণ একান্ত বা গঠনমূলক সমালোচনা করলে সেসকল শিক্ষদের তিনি হুমকি প্রদর্শন করে থাকেন। এতে কলেজে শিক্ষকরা আতংকিত, স্বাধীনতা হারিয়ে বাকরুদ্ধ ভাবে চলাফেরা করছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরোজমিন তদন্ত করেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক প্রলয় দাস।
এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক প্রলয় দাস বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়েছে। যে তথ্য পেয়েছি তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে তদন্ত ফলাফল প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ এ, কে, এম কামরুজ্জামান বলেন ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছিল। অভিযোগ হলে তদন্ত হবে-এটাই স্বাভাবিক। তদন্তে এসেছেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আমার পক্ষ থেকে সমস্ত তথ্য কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। যেগুলো তথ্যে ঘাটতি আছে সেগুলো পূরণ করতে তিনমাস সময় চেয়েছি কিন্তু সময়টি যুক্তিসংহত না হওয়ায় কর্মকর্তা বলেছেন চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন।