সম্মেলনের আগেই তারাকান্দা উপজেলা আ.লীগের দুই শীর্ষ পদ নির্ধারন

তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলন আগামী বোববারে অনুষ্ঠিত হবে।সম্মেলনের আগেই স্থানীয় সাংসদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ নির্ধারণ করে দিয়েছেন বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে।
শীর্ষ দুই পদ নির্ধারন হয়ে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন দলের এ সম্মেলন নিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ নেই।
তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানান,সম্মেলন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সাংসদ ইতিমধ্যে সভাপতি পদে প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী ওরফে রনু ঠাকুর ও সাধারণ সম্পাদক পদে বাবুল মিয়া সরকার ওরফে বাবুল মাস্টারের নাম ঠিক করে রেখেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
প্রদীপ কুমার ও বাবুল মিয়া সরকার ছাড়াও সভাপতি হিসেবে তারাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইনজীবী ফজলুল হক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শামসুল আলমের নাম শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাংসদ ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের একচ্ছত্র আধিপত্ত। কিছু নেতা-কর্মী এ বলয়ের বাইরে থাকলেও তারা সম্মেলন ও কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার মতো সাহস রাখেন না। এমনকি প্রতিমন্ত্রীর কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্যও কেউ করেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা বলেন, প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ যাকে চাইবেন তিনিই নেতা হবেন। প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীরাও কিছু বলবেন না। সবকিছু আগে থেকেই নির্ধারিত। এ কারণে চলতি মাসে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন বাবুল মিয়া সরকার।'
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্মেলনের আগে তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি হচ্ছে, বাবুল মিয়ার অবসর ও তার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা। বাবুল মিয়া স্থানীয়ভাবে বাবুল মাষ্টার নামে বেশি পরিচিত। তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
ছিলেন। অতিসম্প্রতি তিনি শিক্ষকতা থেকে পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষকতা করার সময় থেকেই বাবুল মিয়া সরকার সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের ঘনিষ্ঠ। তারাকান্দা উপজেলার রাজনীতি ও তদবির সবই ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। সরাসরি রাজনীতির সাথে না থেকেও তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। এবার তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে বাবুল মিয়া সরকার বলেন, তিনি ১৯৮০-এর দশকে ছাত্রলীগ করেছেন।পরবর্তী সময়ে সরকারি চাকরি করায় রাজনীতি করতে পারলেও তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী।সরাসরি রাজনীতিতে আসা যতটা নিজের ইচ্ছায়, তার চেয়ে বেশি দলের ইচ্ছায়। তার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। তিনি ১ অক্টোবর চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী ছিলেন তারাকান্দা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শামসুল আলম। তবে বাবুল মিয়া চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রার্থী হওয়ায় শামসুল আলমের সুযােগ কমে গেছে। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে আলােচনারআর কোনো বিষয় নেই।
শামসুল আলম বলেন, উপজেলা গঠিত হওয়ার প্রায় সাত বছর পর প্রথমবার আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহের আমেজ বিরাজকরছে।
নিজের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি বলেন, 'মাননীয় প্রতিমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন,
তাতেই আমার আস্থা আছে।'
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মােয়াজ্জেম হােসেন বলেন, তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ নিবারিত্ব হয়ে গেছে বলে যা শোনা যাচ্ছে, সেটা সঠিক নয়। এই দুটি পদে যে দুজনের নাম এসেছে, তাদের বাইরেও প্রার্থিতা রয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সম্মেলনের বিষয়ে সাংসদ শরীফ আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
২০১৩ সালে ময়মনসিংহ জেলার ১৩তম উপজেলা ঘোষণা করা হয় তারাকান্দাকে। এর আগে এটি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলারঅন্তর্ভূক্ত তারাকান্দা ইউনিয়ন ছিল।
নতুনসময়/আইকে