সেই ভয়ঙ্কর যুবলীগ কর্মী এখন কোথায়?

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ে বিরোধের জের ধরে স্থানীয় এক যুবকের শরীর ড্রিল করে আলোচনায় আসা যুবলীগকর্মী এসরারুল হক ওরফে এসরাল এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। কয়েক মাস আগে এ ঘটনা ঘটে।
ঢাকায় অবৈধ ক্যাসিনোবাণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর অনেক নেতাকে আর এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ।চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শতাধিক নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন।
এছাড়া রোববার রাতে যুবলীগের এক কর্মী র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর আতঙ্কে অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে তিনি গা ঢাকা দেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
কে এই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এসরাল?
এসরারুল হক ওরফে এসরাল চান্দগাঁও-বহদ্দারহাট এলাকায় ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও দাপুটে চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিন দফা জেলও খেটেছে তিনি।
তবে এলাকাবাসীর মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় ও চাঁদাবাজি করে তোলা বিপুল অংকের অর্থের ভাগ পুলিশকে দিয়ে বর্তমানে দোর্দণ্ড প্রতাপে চলাফেরা করেন তিনি।
গত এপ্রিলে চাঁদা না দেয়ায় চট্টগ্রামে আমজাদ হোসেন নামে এক মুরগি ব্যবসায়ী যুবকের পা ড্রিল মেশিন দিয়ে ফুটো করে দেয় সন্ত্রাসীরা।
জানা যায়, এসরালের ক্যাডাররাই ড্রিল মেশিন দিয়ে আমজাদের পা ছিদ্র করে দেয়।
এসরার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ বহদ্দারহাট ও চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দারা। তাদের চাঁদা না দিলে ব্যবসা করা, কোনো উন্নয়ন কাজ করা- কিছুই করা যায় না। কোনো জমি নিয়ে বিরোধ বাধলে তা দখলে নিয়ে দু’পক্ষের কাছে বিপুল অংকের টাকা খসিয়ে নেয় ওই বাহিনী।
এমন কোনো স্ট্যান্ড নেই, যেখান থেকে চাঁদা নেয় না এসরাল বাহিনী। ফুটপাতের হকার, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার থেকেও উঠানো হয় চাঁদা। বাদ যায় না আবাসিক হোটেলও। বালুমহালেও দিতে হয় চাঁদা। বাদ নেই মাদক স্পটও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আনুমানিক দুই শতাধিক চিহ্নিত অপরাধী এসরালের নেতৃত্বে নগরীতে সক্রিয় রয়েছে। তাদের দিয়েই সব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। অনুসারী সন্ত্রাসীরা কেউ ধরা পড়লে এসরালের নাম উল্লেখ না করে আদালতে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। সে কারণে বেঁচে যায় এসরাল।
এসরারুল হক এসরারের বাবার নাম মোহাম্মদ ইউসুফ। তার বর্তমান ঠিকানা নগরীর চন্দাগাঁও থানা এলাকায়। বাড়ি নম্বর এক্স ১৪/২, রোড নম্বর-১, ব্লক-এ। ১৯৯৭ সালে চাঁদাবাজি ও অধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে তার এক ভাইয়ের মৃত্যুর পর উত্থান হয় এসরালের।
২০০৪ সালে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় তার আরও এক ভাই। ১৯৯৮ সালে এসরাল একটি ডাকাতির ঘটনায় দুটি অস্ত্র, এগারো রাউন্ড গুলি ও লুট করা স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রথম গ্রেফতার হয়। চান্দগাঁও থানায় মামলা [০১(৪)৯৮] হয়। জামিনে বেরিয়ে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের এক ছাত্রীকে অপহরণের সময় চন্দনাইশ থানায় অস্ত্রসহ ফের গ্রেফতার হয় এসরাল।
২০০১ সালে বহদ্দারহাট পেপসি কোম্পানির ম্যানেজার অপহরণে মূল হোতা হিসেবেই তার নাম উঠে আসে। সে সময় আরও এক ঘটনায় আলোচিত হয়ে ওঠে এসরাল। পাঁচলাইশ থানা এলাকায় মিমি সুপার মার্কেটসংলগ্ন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলা ও তিনটি অস্ত্র লুটের ঘটনায় প্রধান আসামি ছিল সে। ২০০৩ সালে গোলপাহাড় মোড় এলাকায় চাঞ্চল্যকর একে-২২ রাইফেল অস্ত্র উদ্ধার মামলার প্রধান আসামিও এ এসরাল। [কোতোয়ালি থানা, ৪৪(৪)০৩ ]
২০০৪ সালে খুলশী ইস্পাহানি স্কুলের সামনে থেকে এসরালকে দুটি অস্ত্রসহ ফের গ্রেফতার করে র্যাব-৭। এ মামলায় ১৭ বছর সাজাও হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। নং- ১৪(১০)০৪। কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে যায়। ২০০৬ সালে মুরাদপুরে ব্যবসায়ী আজাদ হত্যার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর এ মামলায় দ্বিতীয় দফায় কারাগারে যায় এসরাল। দেড় বছর কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর জামিনে বের হয়ে আসে। দীর্ঘ এগারো বছর আইনশৃঙখলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল সে। এ সুযোগে আবারও গড়ে তোলে অপরাধ সাম্রাজ্য।
নতুনসময়/এসএম