ঢাকা সোমবার, ৩০শে জুন ২০২৫, ১৬ই আষাঢ় ১৪৩২


বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা


৯ জুলাই ২০২৪ ১৪:৪৬

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত সম্পূরক। চীনের উন্নত প্রযুক্তি এবং  শিল্পখাতের ব্যাপক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের শিল্পখাতকে আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সহায়তা করতে পারবে। 

 

বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মহাসচিব আল মামুন মৃধা ( বিসিসিআই), সোমবার গ্লোবাল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব বলেন।

 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে এ মন্তব্য করেন মামুন মৃধা। চীনা সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, শেখ হাসিনা নতুন মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর এটিই তার প্রথম চীন সফর।

 

সিনহুয়ার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত নথি স্বাক্ষরিত হবে।

 

এই সফরটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উচ্চ প্রত্যাশা তৈরি করেছে কারণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক খাতে চীনের নিকট থেকে আরো বেশি সুযোগ আশা করা হচ্ছে।

 

মৃধা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর আমাদের জন্য এমন এক সময়ে আশার বাণী নিয়ে এনেছে, যখন উভয় দেশ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ককে আরো গভীর করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

তিনি আশা করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং অবকাঠামো, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

 

মৃধা বলেন, এই সম্পর্কগুলোকে শক্তিশালী করা শুধুমাত্র আমাদের বাণিজ্য ভারসাম্যই বাড়াবে না বরং চীনে বাংলাদেশি পণ্য রফতানির নতুন  দুয়ারও উম্মোচন করবে। ফলে উভয় দেশের জন্য টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।

 

চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস প্রকাশিত সর্বশেষ বাণিজ্য তথ্য আনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত, চীন-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭৪.৯১ বিলিয়ন ইউয়ান (১০.৩০ বিলিয়ন ডলার), যা বছরে ০.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।

 

তদুপরি, চীন দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে বিনিয়োগের অন্যতম উৎস।

 

বাংলাদেশে চীনের দূতাবাসের মতে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের স্টক বেড়েছে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশে প্রায় ৭০০টি চীনা তহবিলযুক্ত কোম্পানি রয়েছে। যা ৫৫০,০০০ এরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

 

উৎপাদন, জ্বালানি এবং তথ্য প্রযুক্তির মতো খাতে চীনা বিনিয়োগ আমাদের শিল্পের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় গতি প্রদান করতে পারে। উপরন্তু, উন্নত চীনা প্রযুক্তি এবং পণ্য গ্রহণ বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশি শিল্পের উৎপাদনশীলতা এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে পারে বলেও মনে করেন মৃধা।

 

বাংলাদেশের এই শিল্প প্রতিনিধি আরো বলেন, এই সহযোগিতা আমাদের ভিশন-২০৪১ অর্জনে সহায়ক হবে, যার লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা।

 

এমন বেশ কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে উভয় পক্ষের সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। মৃধার মতে, রাস্তা, সেতু এবং বন্দরের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ডিজিটালাইজেশন সহজতর করতে সাহায্য করে এবং চীন থেকে আধুনিক জ্বালানি সমাধানসহ জ্বালানি খাত।

 

টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস এবং কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও সহযোগিতার জন্য দুর্দান্ত সম্ভাবনা তিনি দেখতে পাচ্ছেন।

 

এই প্রসঙ্গে, মৃধা বলেছেন যে তিনি আশাবাদী যে প্রধানমন্ত্রীর সফর “নতুন অংশীদারিত্বের পথ প্রশস্ত করবে এবং আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে।”

 

চীন-প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে চীন ও বাংলাদেশ ব্যাপক সহযোগিতায় নিযুক্ত হয়েছে, বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়নে, উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করেছে চীন যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। রিসার্চ সেন্টার ফর চায়না-সাউথের সেক্রেটারি-জেনারেল সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এশিয়া কোঅপারেশন, লিউ জংই, সোমবার গ্লোবাল টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছে।

 

বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নীত হওয়া।  লিউ বলেন, চীনের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের কাজকে সহজতর করতে সহায়তা করতে পারে।