ফরিদপুরে করোনা প্রতিরোধে প্রশাসন মাঠে

জেলাবাসীকে করোনা ভাইরোসের ছোবল থেকে রক্ষা করতে কাজ করছে ফরিদপুর জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। দেশে ফেরত প্রবাসীদের খুঁজে বের করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করা, দ্রব্যমূল্য বাড়ানো অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা, বিশেষ পেশাজীবীদের করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষায় পেশাগত স্থান লকডাউন এবং সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং ছাড়াও ধর্মীয় সংগঠনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সচেতনতায় কাজ করছেন বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতারাও।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শহরের সদর হাসপাতালকে করোনা চিকি#সার জন্য নির্ধারণের পাশাপাশি আইসিইউ এবং নবনির্মিত সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
সংক্রমণ রোধে শনিবার (২১ মার্চ) শহরের রথখোলা ও সিএন্ডবি ঘাট (নৌবন্দর) যৌনপল্লি অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। মানবিক কারণে এ সময়ে যৌনকর্মীদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়িওয়ালাদেরকে বন্ধকালীন সময়ে যৌনকর্মীদের কাছ থেকে ঘরভাড়া না নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ প্রশাসন সূত্র জানায়, বর্তমানে জেলায় ৪ হাজার ৩২৯ জন প্রবাসী অবস্থান করছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৯৪ জন বিদেশ থেকে এসেছেন। তবে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন মাত্র ৮৯৭ জন। নিয়ম না মেনে অধিকাংশ প্রবাসীই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন শপিং মল ও বিপণি বিতানগুলোতে।
রবিবার (২২ মার্চ) সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রবাসীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে সতর্ক করে পুলিশ প্রশাসন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, জেলায় ব্যাপক সংখ্যক লোক প্রবাস থেকে এসেছেন। প্রতিনিয়ত হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানকারীর সংখ্যা বাড়ছে।
পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, যে সকল প্রবাসী ফরিদপুরে এসেছেন, তাদের কোয়ারেন্টাইন করতে পুলিশ প্রশাসন সর্বদা মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। প্রবাসীদের বাড়ি চিহ্নিত করে গেটে হোম স্টিকার লাগিয়ে আসা ও কোয়ারেন্টাইন শেষ হওয়ার তারিখ লিখে রাখা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে থাকা তালিকায় কিছু প্রবাসীর বাড়ির পূর্ণ তথ্য না থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের ঠিকানা নিয়ে তাদের বাড়ি চিহ্নিত করে সতর্ক করা হচ্ছে।
অন্যদিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকা, সামাজিক অনুষ্ঠানের ছদ্মাবরণে জনসমাবেশ করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অতুল সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, সিভিল সার্জন ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমানসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জেলায় এ পর্যন্ত ৬৫টি মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার ২০০ টাকা।
করোনা ভাইরাস, হোম কোয়ারেন্টাইনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে জেলাজুড়ে চলছে মাইকিংও। এর বাইরে ধর্মীয় সংগঠনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সচেতনতায় কাজ করছেন বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতারা।
জেলা জাতীয় উলামা পরিষদের সভাপতি ও বাকীগঞ্জ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নির্দেশনায় আমরা জেলার সকল মসজিদে জুমার নামাজসহ ওয়াক্তিয়া নামাজের পরে করোনা ভাইরাস ও হোম কোয়রেন্টাইন সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করছি।’ অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
সার্বিকভাবে করোনা প্রতিরোধের বিষয়ে যা যা সম্ভব তার প্রায় সবগুলোই নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও কাজ চলমান রয়েছে। সবাই মিলে সকল কিছু স্বাভাবিক রাখতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
নতুন সময়/এআর