ট্রমা বা মানসিক আঘাত থেকে কীভাবে বের হবেন

কেউ কেউ, ট্রমায় যাওয়ার পর সবসময় সেখান থেকে বের নাও হয়ে আসতে পারেন। কেউ কেউ বের হয়ে আসেন খুব সহজে। কিছু ট্রমাটিক মুহূর্ত এমন হয়, চারপাশে চারটা উঁচু দেওয়াল দেখতে পাওয়া যায়। ওপরে যাওয়ার কোনো রাস্তা থাকে না। এ ধরনের ট্রমাটিক মুহূর্ত থেকে সহজে বের হওয়া যায় না।
* মানসিক ও সামাজিক সাপোর্ট
ধরুন, নির্যাতনের শিকার একটা মেয়ে যাকে না তার পরিবার সাপোর্ট করছে বা তার সমাজ। তার মনে হতে পারে, সে আস্তে আস্তে ওই পরিবার ও ওই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ওই ব্যক্তির জন্য পারিবারিক ও সামাজিক সাপোর্ট দরকার। সবার বাউন্স-ব্যাক ক্যাপাবিলিটি এক নয়।
* প্রতিকার নয় প্রতিরোধ করুন
তাই কাউকে আঘাত করার আগে, গালিগালাজ করার আগে, তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে, ছোট বা হেয় করার আগে, ইনফেরিওর বা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার আগে একবার চিন্তা করা উচিত। এই ছোট ছোট বিষয় যখন দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যাবে তখন তার জন্য ক্ষতির হয়ে যাবে আর ট্রমার শিকার হতে পারে।
* ইতিবাচক মানসিকতা রাখুন
কোনো কাজ যেভাবে আপনি পরিকল্পনা করেছেন সেভাবে সেটা ঘটেনি। তার মানে এই নয় যে, আপনার গল্প এখানেই শেষ। আরও একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন, হতে পারে আপনি এইবার সফল হবেন।
* সমস্যা কোথায় হচ্ছে বের করুন
সময় সময় তো কারও মন খারাপ থাকে। বিষণ্নতা বা হতাশা আসতে পারে। কিন্তু এটা হচ্ছে কেন? এর শেকড় কোথায়? যদি এ সমস্যা ধরা যায় তবে তার সমাধানও বের করা যায়। কারও একটি চাকরি লাগবে? কেন লাগবে? টাকার জন্য। তাহলে সঠিক উপায়ে সেই টাকা উপার্জন করুন বা সেই রাস্তা বের করুন। দেখবেন সমস্যা থেকে অনেকখানি বের হয়ে গেছেন।
* অ্যাডজাস্ট ও কম্প্রোমাইজ করার অভ্যাস বাদ দিন
আমরা প্রতিনিয়ত কতগুলো বিষয়ের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি, এ অ্যাডজাস্টমেন্ট ও কপ্রোমাইজেশনের ফলে আমরা আরও একটি ভয়ানক সমস্যা ট্রমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কারণ কিছু স্তর পর্যন্ত এই অ্যাডজাস্টমেন্ট ঠিক হলেও একটা সময় নিজের জন্য স্ট্যান্ড করুন।
* বাস্তবতা মেনে নিন, এডপ্ট করুন
অনেক সময় এমন হয় যে, আমাদের চারপাশের পরিবেশের মধ্যে ‘নো কম্প্রোমাইজ’ সেকশন-ই নেই বা থাকে না। না আপনি এ পরিস্থিতি থেকে মুভ অন করতে পারছেন, না আপনি সেখানে থাকতে পারছেন। তাই এডপ্ট করুন কিন্তু মনে রাখবেন সেটা যেন পুরো জীবনের জন্য না হয়ে যায়। তাহলে ফাঁদে পড়ে যাবেন। পৃথিবীতে এমন সমস্যা খুব কম আছে যার কোনো সমাধান নেই। আপনি নিজেকে হয়তো অভাগা বা দুর্ভাগা যাই ভাবুন না কেন তার সমাধানও আছে। ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন।
লেখক : সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।