কেন ঝলছে জাপায় আগুন?

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। অস্থিরতা, আর নানা মেরুকরণ জাতীয় পার্টিতে নতুন কিছু নয়। এ অস্থিরতা আর মেরুকরণের চাবি একজনেরই হাতে-তিনি হচ্ছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের প্রধান ক্ষমতার অধিকারী এরশাদ একাই সিদ্ধান্ত দেন। আবার একাই আবার প্রত্যাহার করেন।
খুব অসুস্থ অবস্থায় দল নিয়ে ভীষণ চিন্তায় এইচএম এরশাদ। পার্টিতে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে অভিনয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার পর সপ্তাহ না যেতেই দলটির সভাপতি মণ্ডলীতে আটজনকে আনা হয়েছে।
গণপদোন্নতিতেও প্রেসিডিয়াম সদস্য হতে না পেরে ক্ষোভে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি। এ অবস্থায় দলে চলছে অস্থিরতা।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে সৈয়দ দিদার বখত, কাজী মামুনুর রশিদ, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নাজমা আখতার এমপি, আবদুস সাত্তার মিয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি ও এমরান হোসেন মিয়াকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করেন এরশাদ।
এর আগে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ছয়জনকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছিলেন জাপা চেয়ারম্যান। এই ৮ জন নিয়ে দলটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্যের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৫।
হঠাৎ করে প্রেসিডিয়াম সদস্য বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, এই সংখ্যা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নয়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নিজ ক্ষমতাবলে (পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনিতেও প্রেসিডিয়ামের অনেক সদস্যই আসেন না। সামনে পার্টির জাতীয় কাউন্সিল আছে। সব কমিটিতেই সদস্য সংখ্যা আমরা ঠিক করে দেব।
এদিকে গণপদোন্নতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি পদত্যাগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দল যেভাবে চলার কথা সেভাবে চলছে না। এ কারণে পদত্যাগ করেছি। অযোগ্যদের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়েছে, যাদের দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা নেতৃত্বে চান না। এই এমপির দাবি, এরশাদের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে `এসব বিশৃঙ্খলা` চলছে জাপায়।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ ছাড়লে দল থেকে পদত্যাগ করেননি লিয়াকত হোসেন খোকা। ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো এমপি যে দলের মনোনয়নে নির্বাচিত হয়েছেন সেই দল থেকে পদত্যাগ করলে সংসদ সদস্য পদ হারাবেন।
লিয়াকত হোসেন বলেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ ছাড়লেও আমি এখনো জাপার কর্মী। দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এরশাদের সঙ্গে আছি। ভবিষ্যতেও থাকব। এরশাদ আমার নেতা। এরশাদের কর্মী হিসেবে কাজ করে যাব।
এর মধ্য দিয়ে জাপায় সেই পুরনো গৃহবিবাদ আবারও শুরু হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মহাসচিবের পদ থেকে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এরশাদের জাপায় শুরু হয় অস্থিরতা। সবশেষ নতুন মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান মশিউর রহমান রাঙ্গা।
এরপর গত ৪মে মধ্যরাতে বারিধারার বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে নিজের ছোট ভাই ও দলের কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
সাংগঠনিক থেকে বলেন, আমার শারীরিক অসুস্থতার জন্য পার্টির কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিঘ্ন হচ্ছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের বলেছিলেন, জাপায় দীর্ঘদিন ধরে চলা কথায় কথায় পদোন্নতি ও বহিষ্কারের রীতি বন্ধ করবেন। দলে যোগ দিয়েই আর কেউ প্রেসিডিয়াম সদস্য হতে পারবেন না। দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে চান তিনি।
গত ২১ মার্চ জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যহতি দেন এরশাদ। পরের দিন তাকে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ সরিয়ে রওশন এরশাদকে এ পদে বসান এরশাদ। গত ৪ এপ্রিল রংপুরের নেতাদের চাপে কো-চেয়ারম্যান পদ ফিরে পান জিএম কাদের। তবে উপনেতার পদে এখনো রওশন রয়েছেন।
জাপা সূত্রের জানান, জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় ক্ষুব্ধ রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। তাদের মোকাবেলায় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের অনুসারীদের নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন জিএম কাদের। তারই অংশ হিসেবে প্রেসিডিয়ামে আটজন নতুন সদস্য যোগ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে এখন চলছে যন্ত্রণা আর ক্ষোভের আগুন।নেতাকর্মীরা স্বস্তিতে নেই, অস্বস্তিতেই দিন কাটাচ্ছে।
নতুনসময়/আল-এম,