ঢাকা রবিবার, ৪ঠা মে ২০২৫, ২২শে বৈশাখ ১৪৩২


জামায়াত নেতাদের মদদ সরকারী কর্মকর্তার !


২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:২৪

সংগৃহীত

রাজধানীসহ সারাদেশে জামায়াত শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কর্মসূচিকে ঘিরে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা। সম্প্রতি দেশের কয়েকটি স্থানে জামায়াত শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এরপর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরো কঠোর হয় বাড়ানো হয় নজরদারী।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সরকারী এক কর্মকর্তার সঙ্গে জামায়াতের কানেকশনের বিষয় তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানা পুলিশের নিকট সংবাদ আসে জামায়াত শিবিরের একদল কর্মি গোপন সভায় মিলিত হয়েছে। নাশকতার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের এমন মিটিং। সংবাদ পাওয়ার পরপরই থানা পুলিশের একটি টিম থানা এলাকার হাসাদহ গ্রামের মসজিদে হানা দেয়। অভিযানের সময় অনেকেই পালিয়ে গেলেও গ্রেফতার করা হয় ১২ জনকে। জব্দ করা হয় বোমা তৈরীর সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমান জিহাদী বই।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের ও রিমান্ডের আবেদন করে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ঘটনাটি নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দাখিল করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিনাঞ্চল তথা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ এবং খুলনা এলাকায় সংঘঠিত হচ্ছে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। বড় ধরনের নাশকতা চালাতে প্রায়ই তারা গোপন মিটিং করছে। মিটিং করতে তারা ব্যবহার করছে জামায়াত সমমনা সরকারী কর্মকর্তার অফিস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে তারা এই পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ঝিনাইদহ জেলার কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্র (টিটিসি)’র অধ্যক্ষ রুস্তম আলী মদদ দেয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রুস্তম আলীর গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার জীবন নগরে। তিনি হাসাদহ ইউনিয়নের বদিনাথপুর গ্রামের মৃত আকবর আলীর পাঁচ ছেলের মধ্যে রুস্তম আলী দ্বিতীয়। আরফিন হাসাদহ ইউনিয়নের জামাত ইসলামের রোকন এবং আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামাত ইসলামী থেকে মনোনীত প্রার্থী। এছাড়াও পুরো পরিবার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সেই সুবাদে এ অঞ্চলের জামায়াতের নেতাকর্মীদের অন্যতম আশ্রয়দাতাও। টিটিসির ভেতরেই বিভিন্ন সময় তিনি জামায়াতের নেতাকর্মীদের গোপন মিটিং করার সুযোগ দিয়ে থাকেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবননগরের হাসাদহ মসজিদের ওই গোপন মিটিংয়ে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর এবং কুষ্টিয়া এলাকার জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। এর কিছুদিন আগে তারা ঝিনাইদহ টিটিসির ভেতরেও পৃথক আরেকটি মিটিংও করেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খবর পাওয়ার আগে তারা সটকে পড়ে। রুস্তম আলী সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে তার অফিস এমনকি তারা বাসাতেও জামায়াত শিবিরের নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করার প্রমান রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রুস্তম আলীর ছেলে সিঙ্গাপুর থাকে পাশাপাশি দেশ থেকে সিঙ্গাপুরে কর্মীও নেয়। সিঙ্গাপুরে নেয়া কর্মীদের সঙ্গে সরকার বিরোধী নানা কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। প্রতিবেদনে কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্রেরও নানা অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে।

ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষন নিতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার বিষয়টির সত্যতা মেলে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিনের কয়েকটি জেলাতে জামায়াত শিবিরের তৎপরতা বেড়েছে। সংগঠিতও হচ্ছে তারা। এসব ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তাসহ জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা গোপন মিটিং করার ব্যাপারে সহায়তাও করছে। প্রতিবেদনে সরকারী কর্মকর্তা হওয়া সত্বেও সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে সহায়তার জন্য তাকে আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে সুপারিশও করা হয়েছে।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে অধ্যক্ষ রুস্তম আলীর সার্বিক বিষয়ে তারা খোঁজ খবর রাখছেন। এক প্রকার নজরদারীর মধ্যে রাখা হয়েছে। যে কোন সময় আইনের আওতায়ও আনা হতে পারে বলেও জানায় সূত্রটি।

জীবননগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুল খালেক বলেন, আমরা সংবাদ পাওয়ার পরপরই ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদনও করেছি।

তিনি বলেন, নাশকতা পরিকল্পনার করার জন্য তাদের মিটিং করেছিল। আর আমাদের নজরদারী এড়াতে মসজিদকেই তারা বেছে নেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমরা কিছু তথ্যও পেয়েছি সেই বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। রিমান্ডে আনা হলে আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেখানে তথ্য পেলে এর পেছনে কারা মদদ দিচ্ছে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে এ বিষয়ে অধ্যক্ষ রুস্তম আলী দাবি করেন, তার সাথে জামায়াতের কোন কানেকশন ।

তিনি বলেন, আমার ভাই জামায়াত করে। কিন্তু তার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নাই। আর অফিসে কোন মিটিং কখনো করিনি।