ঢাকা মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২


খালেদার মুক্তি ভুলে সিটি নির্বাচন উৎসবে মেতেছে বিএনপি!


১০ জানুয়ারী ২০২০ ০৩:২৫

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ধরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়, এমনটাই মনে করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সিনিয়র নেতারা। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথে আন্দোলন। রাজপথে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোন পথ দেখছে না বিএনপি।

গত ১২ ডিসেম্বর আদালত জামিন আবেদন খারিজ করে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তাতে খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘই হবে। এই আদেশের ফলে বিএনপির চেয়ারপারসনকে কারা তত্ত্বাবধায়নে দীর্ঘসময় হাসপাতালেই থাকতে হবে সেটাই প্রতীয়মান হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, আপিল বিভাগে জামিন আবেদন খারিজ হওয়ায় অন্য আরেকটি মামলায়ও জামিনের পথ আটকে গেল। বিএনপি নেতাদের আশা ছিল, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন পেলে অন্য মামলাটিতে খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। জামিন আটকে যাওয়ায় এবং আদালত খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ায় শিগগিরই দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির সম্ভাবনা দেখছে না বিএনপি। বার বার দলটির নেতারা আন্দোলনের হুমকি দিলেও কার্যকরী কোন আন্দোলনে নামছে না হাইকমান্ড। এ কারণে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্ধ শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি। খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা ভুলে গিয়ে এখন সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দলের এ উদ্যোগকেও ভালো চোখে দেখছে না তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী।

বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা বলছেন, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না জানি। তবুও আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এই নির্বাচনে যাচ্ছি। নির্বাচনের মাধ্যমে সক্রিয় হওয়া এবং মানুষের কাছে যেতে চায় দলটি এর মাধ্যমে নেতাকর্মীরা সক্রিয় হবে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা। আর এই নির্বাচনে সরকার যদি কোন অনিয়ম করে তাহলে তখন থেকেই রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি।

এদিকে গত রবিবার (৫ জানুয়ারি) খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত শেষে তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম বলেছেন, তার স্বাস্থ্যের অনেক অবনতি হয়েছে। তার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, কিছু খাচ্ছে না এবং খেলেও তা বমি করে ফেলে দিচ্ছে। ‘সরকার বেগম জিয়াকে জামিন না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাঁর যে চিকিৎসা দরকার এখানে সে চিকিৎসা হচ্ছে না। চিকিৎসা না হলে কেমন করে বাঁচবে সে?’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য আগের চাইতে আরও অনেক বেশি অবনতি হয়েছে। সেদিন তো তার ফাস্টিং বললাম ১৫, আজকে ১৮। তিনি হাত সোজা করতে পারছেন না। হাত বাঁকা হয়ে গেছে। হাতের আঙুল বাঁকা হয়ে গেছে, খুবই খারাপ অবস্থা এবং দুই হাঁটু অপারেশন করা হয়েছে। হাঁটুতেও ব্যথা, হাঁটু ফুলে গেছে, পা ফেলতে পারছেন না। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।’

খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক যেই অবস্থা এখন তাকে জীবন্ত অবস্থায় পেতে হলে প্রথমত আন্দোলন, তা না হলে প্যারোলের মাধ্যমে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ২০ দলীয় জোট ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো থেকে দাবি উঠেছে। কিন্তু প্যারোলে মুক্তির বিষয় নিয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, এটা হচ্ছে বেগম জিয়ার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এই বিষয়ে বিএনপির কাছে কোন ইঙ্গিত এখনো আসেনি।

দলীয় প্রধানের মুক্তির বিষয়ে কি ভাবছে বিএনপি এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি যেহেতু আইন আদালতে নিয়ে গেছে, আমরা আইন আদালতে শ্রদ্ধাশীল তাই আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা মনে করি তার মুক্তি রাজনৈতিক বিবেচনাতেই সম্ভব, সেটি আলোচনা হতে পারে, আন্দোলনের মাধ্যমে হতে পারে। সরকারের যদি বোধদয় হয় তাহলে বাধার সৃষ্টি করবে না। তা না হলে বিএনপি এবং তার সহযোগীরা আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে।

আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন, তাহলে সেই আন্দোলন কবে নাগাদ হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো আন্দোলন এর মধ্যে রয়েছি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করছি। তবে দেশে যেহেতু কোন গণতান্ত্রিক সরকার নেই সেহেতু গণতান্ত্রিক স্পেস পাওয়াটা খুব কঠিন। তার মধ্যেই রাজনৈতিক দলকে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা আশাবাদী যেকোনো মুহূর্তে মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমাদের যে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি আছে তা নানা কারণে মাঝে মাঝে থেমে যাচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার মুক্তির বিষয়টি যে শেষ হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। অন্য কোন বেঞ্চে আবেদন করার সুযোগ আছে। কিন্তু আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি গুলো খনে খনে থেমে যাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেয়ার জন্য নানান কারণ দেখানো হচ্ছে, যেই কারণগুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, আরেকটি পথ হচ্ছে ম্যাডাম যদি নিজে কোনো বিকল্প চিন্তা করে থাকেন তার মুক্তির বিষয়ে সেই ম্যাসেজটা আমাদের লেভেল পর্যন্ত নেই।

নতুনসময়/আইকে