ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জেতাতে মাঠে ওসি !


১৭ মার্চ ২০১৯ ০৫:৩১

ওসি ফিরোজ তালুকদার

ময়মনসিংহের ভালুকা থানার ওসি ফিরোজ তালুকদারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য ভোটারদের নানা রকম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন তিনি । এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীর গণসংযোগ ও তাকে ভোট দিতে সাদা পোশাকে পুলিশ এবং এলাকার বিএনপি নেতাদের উদ্বুদ্ধও  করছেন তিনি। লোকজনের অভিযোগ, নৌকার প্রার্থীর প্রচারণা চালাতেও নানা রকম বাধা দিয়ে যাচ্ছেন। ওসির এমন আচরণে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ওসিকে নির্বাচনের আগেই দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

ওসির এমন আচরণে নির্বাচন কমিশনে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা। তিনি নিজেসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।  ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে তদন্তও করছেন।

জানা গেছে, আগামি ৩১ মার্চ এ উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দীতা হবে মূলত দু’জনের মধ্যে। এরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের মধ্যে।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, আবুল কালাম আজাদ পূর্বে বিএনপি করতেন। সম্প্রতি তাকে কৃষকলীগের পদ দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করান স্থানীয় এমপি  । মূলত তারই মদদে এবারে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। সংসদ সদস্য বোনের জামাই হওয়ার কারণে ওসি বর্তমানে সরাসরি তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি তার বাসার সামনেই নির্বাচনী ক্যাম্প করে দিয়েছেন। যেহেতু আবুল কালাম আজাদ পূর্বে বিএনপি করতেন সেহেতু বিএনপি লোকজনের সঙ্গে এক প্রকার সখ্যতা গড়ে তোলেছেন ওসি ফিরোজ তালুকদার। ওসি নাশকতার কয়েকটি মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দিয়েছেন যাতে করে তাদের নির্বাচনে কাজে লাগানো যায়। বর্তমানে ভালুকা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাতেম আলীকে তার সাথেই রেখেছেন। মূলত ওসির নির্দেশে নৌকার প্রার্থীর প্রচার প্রচারণায় বাধাসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য সরাসরি মাঠে নেমেছেন তিনি। গত শুক্রবার হবিরবাড়ি ইউনিয়নে ছাত্রলীগের এক কর্মী নৌকার প্রচারণা চালানোর সময় বিএনপি কর্মীরা তাকে ওসির নির্দেশে তার সামনেই লাঞ্জিত করেন।

এদিকে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বর্তমান সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দীণের আপন ভগ্নিপতি হওয়ার কারণে থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার সরাসরি তার পক্ষে নিয়েছেন। তার পক্ষ নেয়ার কারণে ওসি পুলিশ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট না দিলে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এমতবস্থায় সাধারন লোকজনের মনে ব্যাপক ভয়ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে ওসিকে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযোগের তদন্ত চলছে। দু’একদিনের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে। তদন্তে সির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেন, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ওসি ততই তার বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। ওসি নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সাদা পোশাকে পুলিশ দিয়ে তার প্রাচারনা চালাচ্ছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, নৌকার প্রচারণা দেখামাত্রই ওসি সাদা পোশাকে পুলিশ দিয়ে তাদের হয়রানী করছে।

অন্যদিকে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। 

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওসিকে আমাকে কোন সুবিধা দেয়নি। উল্টো আমার লোকজনকেই ধরে নিয়ে আসতেছে।

নতুনসময়/আইএ