১৯৭১ সালের এই দিনে সুনামগঞ্জের ঘরে ঘরে উড়ে লাল-সবুজের পতাকা
আজ ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সুনামগঞ্জ শহর হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। অদম্য সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমা শহর ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকবাহিনী। হানাদারমুক্ত হয়ে সুনামগঞ্জ শহরের প্রতিটি এলাকার ঘরে ঘরে উড়ে স্বাধীনতার লাল-সবুজের পতাকা।
কিন্তু সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবসের দিনেই সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা তালেব উদ্দিনসহ ৩ মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পালায় পাক হায়েনারা। এই ঘটনাটি ছিল সুনামগঞ্জের মুক্তিকামী মানুষের জন্য বেদনাদায়ক।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, তখনকার সময়ের ৫ নম্বর সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ মোতালেব সুনামগঞ্জ সীমান্তের যোগীরগাঁও, ক্যাপ্টেন যাদব সুনামগঞ্জ শহরতলির আমবাড়ী বাজার এলাকা ও ক্যাপ্টেন রঘুনাথ গৌরারং এলাকা হয়ে মুক্তিপাগল সেনাদের নিয়ে জীবন বাজি রেখে ভোরে একযোগে সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
এর আগে, ২৭ নভেম্বর পাকসেনারা চারদিক দিয়ে আটঘাট বেঁধে আক্রমণ চালানোর কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে পাশের গোধীগাঁও, নৈদেরখামার ও মীরেরচর এলাকায় এসে অবস্থান নিয়ে পাকসেনাদের সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালান।
এক পর্যায়ে তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা মুক্তিযোদ্ধা তালেব উদ্দিন এখানে আটকা পড়েন। পাকবাহিনী সুনামগঞ্জ ছেড়ে যাওয়ার সময় (৬ ডিসেম্বর ১৯৭১) আহসানমারায় তালেবসহ ৩ জনকে এক রশি দিয়ে বেঁধে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীতে ফেলে যায়। তাদের স্মৃতিতে আহসানমারা সেতু এলাকায় নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ। ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুক্ত হওয়ায় সকলে আনন্দিত হয়ে উল্লাস করলেও তালেব উদ্দিনসহ ৩ মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু সহযোদ্ধাদের কাঁদায়।
এদিকে, সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে ভোরে ৪৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার গণকবর ডলুরা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।
