নোয়াখালীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ১
নোয়াখালীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ১
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এ. কে. এম. সিরাজ উল্যাহর বাড়িতে চোর সন্দেহে পিটিয়ে এক দিনমজুরের মৃত্যুর ঘটনায় এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গ্রেফতার হওয়া আসামির নাম মো. লুৎফুর রহমান ওরফে লাতু (৫৯)। তিনি উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যাদবপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম মাস্টার বাড়ির মৃত নজির আহাম্মদের ছেলে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে নোয়াখালী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় আসামিকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। আদালত শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে, গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার যাদবপুর গ্রাম থেকে পিবিআই নোয়াখালীর একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
নিহত মো. আলাউদ্দিন (২৬) উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাটইয়া গ্রামের মহিন উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন।
পিবিআই জানায়, ২০২৪ সালের ১মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান এ. কে. এম. সিরাজ উল্যাহর বাড়ির ঘাটলায় চোর সন্দেহে আলাউদ্দিনকে আটক করে তার বাড়ির কেয়ারটেকার লাতু। পরে, চেয়ারম্যান সিরাজের নির্দেশে লাতুসহ এজহারনামীয় অন্য আসামিরা লোহার রড, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে মারধর করে আলাউদ্দিনকে গুরুতর জখম করে।
পরবর্তীতে, বিচার আরও বাকী আছে বলে চেয়ারম্যান সিরাজের বসতবাড়ির সামনে আজিমা দরবার হলের আটকে রাখে। একই দিন গভীর রাতে আলাউদ্দিন পালিয়ে গিয়ে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়।
পিবিআই আরও জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য ভিকটিমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার ৫ দিন পর ৬ মে বিকেলে মারা যান। সিরাজ উল্যাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা তৎকালীন রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ঘটনার মীমাংসা করাসহ ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেন। ওই আশ্বাসে নিহতের অসহায় বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনেরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভিকটিমের লাশ বিনা ময়নাতদন্তে গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করেন।
এরপর ১ নম্বর আসামি ও তার স্বজনরা প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সমাধানের উদ্যোগ না নিলে, নিহতের মায়ের আদালতে দায়েরকৃত এজাহারের প্রেক্ষিতে কবিরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। পরবর্তীতে, ১৩ জুন মৃত্যুর ৩৬ দিন পর ভিকটিমের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
নোয়াখালী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) এম ফয়জুর রহমান আরও বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাস নিবিড় তদন্তে হত্যা মামলার এ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। আসামি ঘটনার সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। যা নিয়ে মামলার তদন্ত ও ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামি গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
