হাজারীবাগে ৬ মাস নেই পানি, তবুও বিল নিচ্ছে ওয়াসা!

৬ মাস যাবৎ পানি নেই রাজধানীর হাজারীবাগের বাড্ডানগর এলাকায়। বাসিন্দারা পানি কিনছেন ওয়াসার কাছ থেকে; আবার—পানিশূন্য লাইনের বিলও দিচ্ছেন ওয়াসাকেই। ভোগান্তির কারণে অনেকে এলাকা ছাড়ছেন, যারা স্থানীয় তারা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। কবে মিটবে সংকট, কখন আসবে পানি—জানে না কেউ। বলতে পারছে না খোদ ওয়াসাও।
দীর্ঘদিন পানি না পেয়ে বাড্ডানগর এলাকার এক বাসিন্দা দেড় মাস আগে ওয়াসার পরামর্শে প্রায় লাখ টাকা খরচ করেছেন। ৭০ ফিট খোঁড়াখুঁড়ি করে পানির পাইপ করা দ্বিগুণ মোটা করেছেন। তবুও সুফল মেলেনি। বাড়ির ১০টি ফ্ল্যাটের মানুষ প্রতিদিনের চাহিদা মেটাচ্ছেন বাইরে থেকে পানি কিনে, তবুও নিয়মিত দিচ্ছেন ওয়াসার বিল।
সীমাহীন পানির কষ্টে ভোগান্তিতে পড়েছেন ফ্ল্যাটটির এক নারী গৃহিণী। রান্না থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়া, পরিচ্ছন্নতা—সব কাজেই মেপে মেপে ব্যবহার করছেন জমানো পানি।
অভিযোগ করেন, পানি নেই তবুও বিল নিয়েছে ওয়াসা। আমাদের আশা দিয়েছে—পানি না আসলেও মেরামত করে দেবে। নিয়মিত পানি আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে মাঝখানে দুইদিন ঠিক হয়ে গেলেও আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে।
ফ্ল্যাটটির অন্য এক বাসিন্দা জানান, তাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক কষ্টের মধ্যে আছে, বাইরে থেকে পানি কিনে এনে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ মেটাচ্ছেন। গোসল ছাড়াই কাজে যান বলেও অভিযোগ করেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২২ নং ওয়ার্ড, হাজারীবাগের বাড্ডানগর, ১০ নং গলি, কুলাল মহল, গণকটুলি সিটি এলাকার বাসিন্দারা মাসের পর মাস পানি সংকটে। চরম ভোগান্তিতে এলাকা ছাড়ার উপক্রম অনেকের। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, পানির কষ্টে এক ছেলের বউ গ্রামে চলে গেছে, কারণ তাদের ছেলে-মেয়েদের বেশ কষ্ট হয়।
এলাকাভেদে সাইকেল পদ্ধতিতে দিনের একটি সময় পানি সরবরাহ করা হলেও তা অপর্যাপ্ত। প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটছে না। একজন বলেন, ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পানি ছাড়া থাকতে হচ্ছে। আর রাতের বেলায় নিয়মিত পানিই পাওয়া যায় না।
সরেজমিনে হাজারীবাগ পানির পাম্পে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে সচল দুটি পাম্প। এলাকায় পানি সরবরাহ হয় আরও কয়েকটি পাম্পের সমন্বয়ে। তবে কয়েক বছর আগেও প্রতি পাম্পে যেখানে মিনিটে ২ হাজার লিটার পানি উঠতো, তা এখন মিনিটে ১৩শ লিটারে নেমে এসেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মিনিটে ৭০০ লিটার পানি কম আসছে বলে জানিয়েছেন পাম্প চালক।
তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় পাম্প চালু থাকে। বিদ্যুৎ না থাকলে কেবল বন্ধ থাকে। আগের থেকে পানির গতি একটু কমেছে, কারণ পানির লেয়ার নিচে নেমেছে।
পানি সরবরাহে সমস্যা কোথায়? মুঠোফোনে ওয়াসা জোন-২ সাইট ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক বলেন, বিভিন্ন পাম্পের পানির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আর হাজারীবাগে নতুন বোরিং করা হবে। ইতোমধ্যে মালামাল চলে আসছে। হাজারীবাগ-৩ এ নতুন বোরিং হচ্ছে।
অন্যদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা গেলে সাড়া পাওয়া যায়নি। তার কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, সকাল থেকেই অফিসে নেই। সাইট ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পড়তে হয় সিকিউরিটির বাধার মুখে।
এদিকে, ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর ব্যস্ততা ও যোগাযোগের প্রটোকলের কারণে তারও সাড়া মেলেনি।