ঢাকা শুক্রবার, ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯শে ভাদ্র ১৪৩২


ডাকসুতে শিবিরের জয়ে শশী থারুরের উদ্বেগ, কড়া জবাব মেঘমল্লারের


১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৪

সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের বিশাল জয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা ও ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিক শশী থারুর। তবে তার এই মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন ডাকসুর প্রতিরোধ পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু।

 

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক পোস্টে তিনি একথা বলেন।

 

তিনি উল্লেখ করেন, প্রিয় মি. শশী থারুর, আমি নিশ্চিত, এই বার্তাটি আপনার কাছে পৌঁছাবে না। আর যদি পৌঁছায়ও, আপনি হয়তো এটিকে গুরুত্ব দেবেন না—মূলত কারণ আমার ইংরেজি আপনার মতো অর্ধেকও প্রাঞ্জল নয়। আমার নাম মেঘমল্লার বসু। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাম্প্রতিক নির্বাচনে ‘ফোর্স অব রেজিস্ট্যান্স’ প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। রাষ্ট্রযন্ত্রের সম্পৃক্ততা, উগ্র ইসলামোফ্যাসিবাদী প্রবণতা, অর্থ ও পেশিশক্তির বিরাট বৈষম্য সত্ত্বেও আমি প্রায় পাঁচ হাজার ভোট পেয়েছি। এটা বলাই যায়, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করি।

 

আমি আমার ভোটারদের পক্ষ থেকে বলছি—বাংলাদেশের ডানপন্থী রাজনীতি নিয়ে দয়া করে কোনো মন্তব্য করবেন না। আপনার বিশ্লেষণ যে জনগণ দুই প্রধান দলের দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে বিকল্প খুঁজছে, তা সত্যি। কিন্তু আপনি বোঝেন না, আপনার মন্তব্য কেবল বাংলাদেশে উগ্র ডানপন্থীদেরই সুবিধা করে দেয়। আপনি বোঝেন না, বাংলাদেশে মানুষ আপনাকে কীভাবে দেখছে। আপনার বিন্দুমাত্র বিনয় নেই এটা বুঝতে যে, অনিচ্ছাকৃতভাবেই আপনি জামায়াতের জনসংযোগ প্রচারণা চালাচ্ছেন।

 

তার ওপর, ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয় আপনার কাছে কেন ‘উদ্বেগজনক’? আপনি কি সেই একই ব্যক্তি নন যিনি কেরালায় সাবরিমালা ইস্যুতে ডানপন্থী প্রচারণা চালিয়েছিলেন, শুধু সিপিআইএম-কে হারানোর জন্য? যদি কোনো প্রতিবেশী দেশকে উপদেশ দিতে চান, আগে জাতীয় নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের হারিয়ে দেখান। একটি প্রবাদ আছে—যারা কাঁচের ঘরে থাকে তারা অন্যের ঘরে পাথর ছোঁড়ে না। যারা মোদি-অমিত শাহকে টানা তিনবার হারাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের আরেক দেশের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে কী হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার বিলাসিতা থাকা উচিত নয়।

 

ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশে এমনিতেই এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে যে, আপনার বক্তব্যই শিবিরকে শক্তিশালী করে। হাতে যদি এত অবসর সময় থাকে, তাহলে আরও কিছু স্ট্যান্ডআপ শো করতে পারেন। আগেরটা বেশ বিনোদনমূলক ছিল।

 

আমাদের নিজেদের যন্ত্র আমরা নিজেরাই মেরামত করব। আশা করি ভারতের মানুষ অবশেষে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের নির্বাচনে পরাজিত করতে পারবে। আর আমরা আমাদের দেশে ইসলামোফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। প্রয়োজনে আমরা একে অপরের সঙ্গে সংহতিও প্রকাশ করব। কিন্তু দয়া করে এসব বক্তৃতা বন্ধ করুন। আপনি আমাদের চেয়ে একটুও ভালো নন।

 

এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে শশী থারুর ডাকসুতে জামায়াত-সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের সাফল্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ‘এটি হয়তো বেশিরভাগ ভারতীয়র কাছে আলোড়ন সৃষ্টি করেনি, কিন্তু এটি ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত। বাংলাদেশে এখন দুই প্রধান দল—আওয়ামী লীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) এবং বিএনপি—উভয়ের প্রতিই মানুষের বিরক্তি বেড়েছে। অনেকেই ‘উভয়ের সর্বনাশ হোক’ মনোভাব থেকে জামায়াতের দিকে ঝুঁকছে। তারা জামায়াতকে বেছে নিচ্ছে না ধর্মীয় উগ্রতার কারণে, বরং এজন্য যে দলটি, সঠিক হোক বা ভুল, দুই মূল ধারার দলের মতো দুর্নীতি ও কুশাসনে কলঙ্কিত নয়।’

 

থারুর আরও প্রশ্ন তোলেন, ‘এই প্রবণতা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রতিফলিত হবে? ভারতকে কি তখন প্রতিবেশী হিসেবে জামায়াত সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে?’

 

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির সাম্প্রতিক এই ফলাফল নিয়ে দুই দেশের এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাল্টাপাল্টি মন্তব্য নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।