ঢাকা মঙ্গলবার, ২১শে মে ২০২৪, ৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


ভেন্যু বদলানোর সিদ্ধান্ত না জানালে নয়াপল্টনের নিয়ন্ত্রন নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী


৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:২৪

ফাইল ছবি

গণসমাবেশের স্থান নয়াপল্টনে ব্যাপারে বিএনপি অনড় থাকলে ১০ তারিখের আগেই সেটি নিয়ন্ত্রন নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আগামিকাল ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময়ের মধ্যে গণসমাবেশের স্থান পরিবর্তন না হলে নয়াপল্টনসহ আশপাশের পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও গ্রহন করা হচ্ছে। ডিএমপি সবগুলো ইউনিট ডিবি, সোয়াট, কাউন্টার টেরোরিজম প্রস্তুতি গ্রহন করছে। পাশাপাশি র‌্যাবও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, মাঠ ছাড়া রাস্তায় সমাবেশ করার অনুমতি পাবে না বিএনপি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, পল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশের আয়োজন ও বিএনপির পক্ষ থেকে অনুমতির চাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য জানতে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাংবাদিকরা। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, মাঠ ছাড়া রাস্তা-ঘাটে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাদে অন্য কোনো স্থানের নাম প্রস্তাব এখনো করেনি বিএনপি।

ডিএমপির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগামিকাল বুধবার (৭ডিসেম্বর) পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। এরই মধ্যে বিএনপি তাদের সিদ্ধান্ত না বদলালে অর্থাৎ অনুমোদিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হবে। অর্থাৎ পল্টনে কোনভাবেই সমাবেশ করতে দেয়া হবেনা। পুলিশের অনুমতির বাইরে সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

এই কর্মকর্তা বলেন, বেআাইনি সমাবেশ বা জমায়েত হতে দেবে না পুলিশ। এক্ষেত্রে ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকেই নয়াপল্টনের নিয়ন্ত্রন নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া শুরু হবে। পুরো নয়াপল্টনসহ আশপাশের পুরো এলাকা নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কর্ডন করে ফেলা হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে ডিএমপি।

ডিএমপির রিজার্ভ ফোর্সের সঙ্গে সোয়াট, সিটিটিসি এমনকি র‌্যাবও থাকবে নয়াপল্টন জুড়ে। কোন জমায়েত সেখানে হতে দেয়া হবেনা। এক্ষেত্রে পুলিশের কাজে বাধা দিতে কেউ আসলে পুলিশ পুরোপুরি অ্যাকশনে যাবে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার ফারুক আহমেদ বলেন, বিএনপিকে কিছু শর্ত দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেটাই সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। সেই অনুপাতে আমাদের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। তবে যদি এই নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটনা হয় বা ঘটানোর চেষ্টা করা হয় তবে আমরা ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, যে কোন ধরনের নাশকতা রোধে পুলিশ সতর্ক থাকবে। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবেনা। রাজধানী জুড়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিটি ডিভিশনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি থানাকে এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে কোন বিশৃঙ্খলা কঠোর হস্তে দমন করবে পুলিশ।

তিনি বলেন, নগরবাসী নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে।

র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে যেকোনো ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড, হেলিকপ্টার ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। নাশকতার পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেজন্য সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সুষ্ঠু-স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারি ও বিরোধী দল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। র‌্যাব সাধারণত জঙ্গি দমন, মাদক কারবারি, অস্ত্রধারী ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে আস্থা অর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বিদেশি স্থাপনা ও অ্যাম্বাসি রয়েছে। ঢাকা শহরের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সবসময় সচেষ্ট রয়েছি। শুধুমাত্র এই জনসমাবেশ ঘিরে নয় আমরা সবসময় জননিরাপত্তা, দেশীয় ভাবমূর্তি রক্ষা, বিদেশীদের কাছে যেন দেশীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে সচেষ্ট রয়েছি। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড, হেলিকপ্টার ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে।

বিএনপির জনসমাবেশ ঘিরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে রুটিন পেট্রোল থাকবে, চেকপোস্ট থাকবে, সাইবার ওয়ার্ল্ডে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। যাতে কোনো ধরনের উসকানিমূলক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে নাশকতার চেষ্টা না হয়, সেজন্য র‌্যাবের সদস্যরা সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে।

এদিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে জ্বালাও- পোড়াও, ভাঙচুরের মতো নাশকতার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা। তাই যে কোন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোপূর্বে দায়েরকৃত নাশকতা ও বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি ও পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া মাদক, দণ্ডপ্রাপ্ত, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চোর, ছিনতাইকারীসহ নানা অপরাধে জড়িতরাও রয়েছে।

গত ২৯ ডিসেম্বর পুলিশ সদরদপ্তর থেকে আগামি ১৫ দিন সারাদেশে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়। সেই নির্দেশ মোতাবেক রাজধানীসহ সারাদেশেই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে। প্রথমদিনের অভিযানে রাজধানীতে ৪৭২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ রয়েছে। সেখানে অনেক পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। কোনো অসাধুচক্র কোনো ধরনের সমস্যা যেন না করতে না পারে, সেজন্য আমরা কাজ করছি। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে কি-না, সে বিষয়েও আগাম তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সমাবেশের আগে সমাবেশস্থলে এসে বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়ো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেরকম কিছু করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করলে, সেই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। আমরা সেভাবেই বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছি। তারপরও কেউ যদি নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে আমরা তাকে ছাড় দেব না। তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

আইএ /